Dhaka 1:06 am, Saturday, 15 March 2025

শিসের সুরেই যোগাযোগ করেন এই গ্রামবাসী!

একটি গ্রাম যেখানে কোন মানুষ কথা বলে না। এখানে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই সুরে সুরে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে! অদ্ভুত ও সুরেলা এ গ্রামের নাম কংথং, যা মেঘালয়ের গভীরে অবস্থিত। এখানে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বাঁশির সুর আর গানের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মানুষের নাম এখানে শুধুই শব্দ নয়, একটি বিশেষ সুর, যা তাকে সারা জীবন ডাকতে ব্যবহৃত হয়। শুনতে অবাক লাগলেও, এই গ্রামের মানুষরা প্রাচীন খাসি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যকে ধরে রেখে গানের মাধ্যমে তাদের পরিচয় বহন করে চলেছেন। আর এই সুরেলা প্রথাই তাদের পরিচিতি এনে দিয়েছে ভারতের ‘বাঁশির গ্রাম’ হিসেবে।

এই বিশেষ প্রথার নাম ‘জিংরোয়াই লাওবেই’, যার মাধ্যমে মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য একটি অনন্য সুর তৈরি করেন। এই সুরই সেই সন্তানের পরিচয় হয়ে ওঠে। ইবাসিশা খংসিত, গ্রামের একজন বাসিন্দা, জানালেন যে তারা ছোটবেলায় তাদের মা-বাবাদের কাছ থেকে এই সুর শিখেছেন। আজ তারাও তাদের সন্তানদের এই ঐতিহ্য শিখিয়ে যাচ্ছেন।

তারা বলেন, যখন কোনও বন্ধুকে ডাকা প্রয়োজন, তারা সুর তোলেন, এবং উত্তরটাও সুরেই আসে। এই সুরের মাধ্যমে তারা কাজের সময়ও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

কংথং-এর এই সুরেলা ঐতিহ্য এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শিলং থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটিতে আজকাল বহু পর্যটক আসেন কেবল এই ঐতিহ্যটি দেখার জন্য।

স্থানীয় পর্যটন সমন্বয়ক রাফায়েল রালফ শাদাপ জানালেন, গ্রামের দূরবর্তী অবস্থান সত্ত্বেও এই অনন্য সুরের সংস্কৃতি তাদের বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছে। এমনকি এই গ্রামকে ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন কর্তৃক ভারতের সেরা পর্যটন গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

এই গ্রামের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে বাঁশির সুর যেন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে প্রতিটি ডাক, প্রতিটি যোগাযোগ, এমনকি কাজ করার সময়ও সুরের মধ্যেই প্রকাশিত হয়। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক সুরেলা ভাষা, যা মানুষকে শুধু একে অপরের সঙ্গে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গেও যোগ করে।

এই গ্রামে প্রযুক্তি নয়, সুরের মধ্যে লুকিয়ে আছে যোগাযোগের শক্তি। পর্যটকরা এখানে এসে সেই সুরের মধ্যেই হারিয়ে যান, যেখানে প্রতিটি ডাকের মধ্যেই মিশে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা ঐতিহ্যের সুর।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

শিসের সুরেই যোগাযোগ করেন এই গ্রামবাসী!

Update Time : 07:06:25 pm, Wednesday, 22 January 2025

একটি গ্রাম যেখানে কোন মানুষ কথা বলে না। এখানে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই সুরে সুরে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে! অদ্ভুত ও সুরেলা এ গ্রামের নাম কংথং, যা মেঘালয়ের গভীরে অবস্থিত। এখানে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বাঁশির সুর আর গানের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মানুষের নাম এখানে শুধুই শব্দ নয়, একটি বিশেষ সুর, যা তাকে সারা জীবন ডাকতে ব্যবহৃত হয়। শুনতে অবাক লাগলেও, এই গ্রামের মানুষরা প্রাচীন খাসি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যকে ধরে রেখে গানের মাধ্যমে তাদের পরিচয় বহন করে চলেছেন। আর এই সুরেলা প্রথাই তাদের পরিচিতি এনে দিয়েছে ভারতের ‘বাঁশির গ্রাম’ হিসেবে।

এই বিশেষ প্রথার নাম ‘জিংরোয়াই লাওবেই’, যার মাধ্যমে মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য একটি অনন্য সুর তৈরি করেন। এই সুরই সেই সন্তানের পরিচয় হয়ে ওঠে। ইবাসিশা খংসিত, গ্রামের একজন বাসিন্দা, জানালেন যে তারা ছোটবেলায় তাদের মা-বাবাদের কাছ থেকে এই সুর শিখেছেন। আজ তারাও তাদের সন্তানদের এই ঐতিহ্য শিখিয়ে যাচ্ছেন।

তারা বলেন, যখন কোনও বন্ধুকে ডাকা প্রয়োজন, তারা সুর তোলেন, এবং উত্তরটাও সুরেই আসে। এই সুরের মাধ্যমে তারা কাজের সময়ও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

কংথং-এর এই সুরেলা ঐতিহ্য এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শিলং থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটিতে আজকাল বহু পর্যটক আসেন কেবল এই ঐতিহ্যটি দেখার জন্য।

স্থানীয় পর্যটন সমন্বয়ক রাফায়েল রালফ শাদাপ জানালেন, গ্রামের দূরবর্তী অবস্থান সত্ত্বেও এই অনন্য সুরের সংস্কৃতি তাদের বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছে। এমনকি এই গ্রামকে ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন কর্তৃক ভারতের সেরা পর্যটন গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।

এই গ্রামের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনে বাঁশির সুর যেন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে প্রতিটি ডাক, প্রতিটি যোগাযোগ, এমনকি কাজ করার সময়ও সুরের মধ্যেই প্রকাশিত হয়। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক সুরেলা ভাষা, যা মানুষকে শুধু একে অপরের সঙ্গে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গেও যোগ করে।

এই গ্রামে প্রযুক্তি নয়, সুরের মধ্যে লুকিয়ে আছে যোগাযোগের শক্তি। পর্যটকরা এখানে এসে সেই সুরের মধ্যেই হারিয়ে যান, যেখানে প্রতিটি ডাকের মধ্যেই মিশে থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা ঐতিহ্যের সুর।