Dhaka 12:13 am, Saturday, 29 March 2025

সিরিয়াতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে মরিয়া তুরস্ক

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতনের পর পাল্টে গেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির সমীকরণ। দেশটিকে
ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে আছে বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে তুরস্ক অন্যতম।
তবে সেখানে আঙ্কারার প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারে ইসরাইল। যদিও আসাদের পতনকে ইসরাইলের বিজয়
হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া তিনি গোলান মালভূমির বাফার জোনে
(নিরাপদ অঞ্চল) তার সেনা মোতায়েন করেছেন। এরপরেও উদ্বেগ কাটছে না ইসরাইলের। কেননা আসাদ
সরকারের পতনে ভূমিকা রাখা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) তুরস্ক ঘনিষ্ঠ
হওয়ায় দেশটির রাজনীতিতে আঙ্কারার হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির আশঙ্কায় চিন্তার ভাজ পড়েছে ইসরাইলের কপালে।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দ্য জেরুজালেম পোস্ট বলছে, আসাদ সরকারের পতনে ওই অঞ্চলে কার্যত
দুর্বল হয়ে পড়েছে ইরান। এছাড়া সেখানে যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে তারা মিশরের ইসলামপন্থি দল
মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থক। যা নিয়ে ইসরাইল ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। অন্যদিকে
এইচটিএস তুরস্ক ও কাতার সমর্থিত একটি সুন্নি গোষ্ঠী হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে
উঠবে বলে উল্লেখ করেছে জেরুজালেম পোস্ট। কারণ হিসেবে তারা প্রথম যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছে তা
হচ্ছে- এখন যদি সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয় তুরস্ক তাহলে এর
প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে এখনও দ্বিধায় রয়েছে ইসরাইল। অন্যদিকে তুরস্কের এ বিষয়টি ইসরাইলে মার্কিন
অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়টি বাধাগ্রস্ত করবে কি না সে দিকেও নজর রেখেছে তারা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সম্পর্কের উপরও
কিছু বিষয় নির্ভর করছে। কেননা এ দুই নেতার সম্পর্কে টানাপোড়েনের বিষয়টি স্পষ্ট। যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে
নিরাপত্তা হাবগুলো জোরদার করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প বেশ জোরালো ভূমিকা নিতে পারেন বলে ধারণা রয়েছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ন্যাটো থেকে তুরস্ককে বাদ দেয়ার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে পশ্চিমা জোটের
কয়েকটি দেশ। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে তুরস্ক নিজের প্রভাব বিস্তার থেকে পিছিয়ে থাকবে না
বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। কেননা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত
শক্তিগুলোর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তা ভালোভাবেই চিহ্নিত করেছিলেন এরদোগান। যার ফলে এই অঞ্চলে
এরদোগান নিজেকে ‘নতুন পুতিন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছে জেরুজালেম পোস্ট।
গণমাধ্যমটি বলছে, রাশিয়া ও ইরানের খরচে আজারবাইজান দিয়ে একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের কাজ
এগিয়ে নিচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এছাড়া তুরস্কের আকাশ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিমান চলাচলও বৃদ্ধি করছেন
তিনি। সম্ভবত সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রভাব বিস্তারেই এসব করছেন এরদোগান। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে দামেস্কের
শাসনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে তুরস্ক। যদিও তুরস্কের বর্তমান অর্থনীতি কিছুটা অস্থিতিশীল। তারপরেও
ভূরাজনৈতিক শক্তি গ্রহণে পিছপা হতে চায় না আঙ্কারা।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ
বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

সিরিয়াতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে মরিয়া তুরস্ক

Update Time : 06:19:58 pm, Sunday, 22 December 2024
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতনের পর পাল্টে গেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির সমীকরণ। দেশটিকে
ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে আছে বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে তুরস্ক অন্যতম।
তবে সেখানে আঙ্কারার প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারে ইসরাইল। যদিও আসাদের পতনকে ইসরাইলের বিজয়
হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া তিনি গোলান মালভূমির বাফার জোনে
(নিরাপদ অঞ্চল) তার সেনা মোতায়েন করেছেন। এরপরেও উদ্বেগ কাটছে না ইসরাইলের। কেননা আসাদ
সরকারের পতনে ভূমিকা রাখা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) তুরস্ক ঘনিষ্ঠ
হওয়ায় দেশটির রাজনীতিতে আঙ্কারার হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির আশঙ্কায় চিন্তার ভাজ পড়েছে ইসরাইলের কপালে।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দ্য জেরুজালেম পোস্ট বলছে, আসাদ সরকারের পতনে ওই অঞ্চলে কার্যত
দুর্বল হয়ে পড়েছে ইরান। এছাড়া সেখানে যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে তারা মিশরের ইসলামপন্থি দল
মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থক। যা নিয়ে ইসরাইল ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। অন্যদিকে
এইচটিএস তুরস্ক ও কাতার সমর্থিত একটি সুন্নি গোষ্ঠী হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে
উঠবে বলে উল্লেখ করেছে জেরুজালেম পোস্ট। কারণ হিসেবে তারা প্রথম যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছে তা
হচ্ছে- এখন যদি সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয় তুরস্ক তাহলে এর
প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে এখনও দ্বিধায় রয়েছে ইসরাইল। অন্যদিকে তুরস্কের এ বিষয়টি ইসরাইলে মার্কিন
অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়টি বাধাগ্রস্ত করবে কি না সে দিকেও নজর রেখেছে তারা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সম্পর্কের উপরও
কিছু বিষয় নির্ভর করছে। কেননা এ দুই নেতার সম্পর্কে টানাপোড়েনের বিষয়টি স্পষ্ট। যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে
নিরাপত্তা হাবগুলো জোরদার করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প বেশ জোরালো ভূমিকা নিতে পারেন বলে ধারণা রয়েছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ন্যাটো থেকে তুরস্ককে বাদ দেয়ার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে পশ্চিমা জোটের
কয়েকটি দেশ। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে তুরস্ক নিজের প্রভাব বিস্তার থেকে পিছিয়ে থাকবে না
বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। কেননা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত
শক্তিগুলোর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তা ভালোভাবেই চিহ্নিত করেছিলেন এরদোগান। যার ফলে এই অঞ্চলে
এরদোগান নিজেকে ‘নতুন পুতিন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছে জেরুজালেম পোস্ট।
গণমাধ্যমটি বলছে, রাশিয়া ও ইরানের খরচে আজারবাইজান দিয়ে একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের কাজ
এগিয়ে নিচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এছাড়া তুরস্কের আকাশ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিমান চলাচলও বৃদ্ধি করছেন
তিনি। সম্ভবত সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রভাব বিস্তারেই এসব করছেন এরদোগান। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে দামেস্কের
শাসনব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে তুরস্ক। যদিও তুরস্কের বর্তমান অর্থনীতি কিছুটা অস্থিতিশীল। তারপরেও
ভূরাজনৈতিক শক্তি গ্রহণে পিছপা হতে চায় না আঙ্কারা।