
জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সেনা সদস্য মনিরুল ইসলাম ও তার ভাই আবু হানিফ এর নির্যাতনের স্বীকার হন একই গ্রামের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন ও আব্দুল আলিম। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার পৌরসভা ৪নং ওয়ার্ড বড় আলমপুর গ্রামে। দেবিদ্বার সেনা ক্যাম্পে চোরাকারবারী, সন্ত্রাসসহ মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সেনা সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম সেনাবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে বেধরক মারধর ও লাঞ্ছিত করান। ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিন (৪৭) বড় আলমপুর গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমান এর ছেলে। কামাল উদ্দিন তার পাশ্ববর্তী চাচাতো ফুফু সাফিয়া খাতুনের কাছ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা মূল্যে ১০-০২-২০১৩ ইং তারিখে ৫ শতাংশ জায়গা ক্রয় করেন। যার দলিল নং- ১২৩৭,এস.এ নং- ৯০২, বি.এস- ৩১৯৮ ( ১০ শতাংশের মধ্যে ৮.৮৩ শতাংশ হতে ৫ শতাংশ। সাফিয়া খাতুন একই গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর মেয়ে। সাফিয়া খাতুনে ভাই ফজলুল হক তার বোন ৫ শতাংশ জমি বিক্রিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে আদালতে একটি দেওয়ানী-মামলা করেন যার মামলা নং- ১৬৩। ফজলুল হকের ছেলে মনিরুল ইসলাম ও আবু হানিফ এর আপন ফুফু। তারা বলেন সম্পত্তির হার অনুপাতে তার ফুফু ২ শতাংশ জায়গার মালিক কিন্তু সাফিয়া খাতুন এস.এ- ৯০২ এবং ফরায়েয আইন অনুযায়ী ৮.৮৩ শতাংশ জায়গা পান। সেই ৮.৮৩ শতাংশ জায়গা থেকে সাফিয়া খাতুন তার চাচাতো ভাই কামাল উদ্দিন এর কাছে বিক্রি করেন। মামলাটি দীর্ঘ ১৪ বছর চললাম থাকার পর গত ০৩-১০-২০২৩ ইং তারিখে কুমিল্লা দায়রা সিনিয়র সহকারী জজ লাকসাম আদালতে আয়েশা বেগম রায় দেন কামাল উদ্দিনের পক্ষে। সেই রায় মানতে অস্বীকৃতি জানান ফজলুল হক ও তার ছেলে সেনা সদস্য মনিরুল ইসলাম এবং আবু হানিফ। এই রায়ের বিরুদ্ধে সেনা সদস্যের পরিবার আপিল করেন এবং মামলা চলমান আছে।
একই ভাবে আব্দুল আলিম (৫৫), মৃত বক্স আলীর ছেলে সেনা সদস্য মনিরুল ইসলামের আপন চাচাতো ভাই। সি.এস ১০০, এস.এ ১৩২ এবং বি.এস ৬২৪,৬২৬ নং খতিয়ানে সাবেক ৮৯৭ হালে ৩১৮২ দাগে ২৫ শতাংশের মধ্যে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং ৮৯৭/৯০২ হালে ৩১৯৮ দাগে ৮ শতাংশের মধ্যে দের শতাংশ মিলে মোট ৭ শতাংশ জায়গা। সেই ৭ শতাংশ জায়গা ফজলুল হকের নামে বি.এস রেকর্ড ভুক্ত হয়। এই নিয়ে আপন চাচা ফজলুল হকের পরিবারের সঙ্গে দন্ড হয়। ভুক্তভোগী আব্দুল আলিম জায়গা ফেরত পেতে আদালতে দেওয়ানিমামলা করে, যারা মামলা নং- ৪৩/২০২১। পরবর্তীতে আদালত পর্যন্ত যায় তাদের পারিবারিক জায়গা নিয়ে বিরোধের বিষয়টি। আদালত উভয় পক্ষকে নির্দেশনা দেয় যে মিমাংসা না হওয়ার আগপর্যন্ত কেউ যেন ঝগড়া কিংবা ঝামেলায় না করে। পরে আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সেনা সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম সেনাবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে বেধরক মারধর ও লাঞ্ছিত করান।
এই বিষয়টি স্থানীয় এলাকাবাসী জানতে পেরে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহা সড়কের দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবেদা খাতুন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে অভিযোগকারী সেনা সদস্য ও তার ভাইয়ের শাস্তির দাবীতে মানবন্ধন ও প্রশাসনের কাছে গণস্বাক্ষরকৃত অভিযোগ করেছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ’বিষয়টি জানতে পেরে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার পক্ষ থেকে আপনাদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে যতটুকু সহযোগীতা লাগে আমি তা করবো। আপনারা এখন বিক্ষোভ বন্ধ করে বাড়ি চলে যাওয়ার অনুরোধ করলে বিক্ষোভ কারীরা বাড়ি ফিরে যান। এলাকাবাসী বলেন, দেবিদ্বার পৌর এলাকার বড়আলমপুর গ্রামের মো. ফজলুল হকের ছেলে সেনা সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম(৩৮) ও তার ভাই আবু হানিফ এর সাথে একই বাড়ির মৃত: ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মো. কামাল উদ্দিন (৫০) ও আব্দুল আলিম (৫৫)’র প্রায় ১৪ বছর ধরে জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো। ওই ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারী রাত ১২টায় দেবিদ্বার সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন রায়হানুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য এসে কামাল উদ্দিন ও আব্দুল হাকিম কে ডেকে নিয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত অমানবিকভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করে ছেড়ে দেন। তিনি আরো বলেন, এসময় কামাল উদ্দিনের প্রতিবন্দী শিশুকণ্যা সুমাইয়া আক্তারও নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সেনা সদস্য মনিরুল ইসলাম ফোনে জানান, আমি বাড়িতে এসে, ঘরের সংস্কার কাজ করতে গেলে প্রতিপক্ষ আমাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেই ক্ষান্ত হয়নি, ওরা আমার পোষাক ছিড়ে ফেললে আমি এ ঘটনার বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দেবিদ্বার সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করি। সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা এসে মো. কামাল উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেন।
ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিন বলেন, আমি সাফিয়া খাতুনের নিকট থেকে জায়গাটি টাকার বিনিময়ে ক্রয় করি। আমি জায়গাটি ক্রয় করার পর এখানে আমি বসতঘর নির্মাণ করি এবং এখনে আজও বসবাস করছি। আমার প্রতিপক্ষ ফজলুল হক ও তার ছেলে সেনা সদস্য মনিরুল ইসলাম এবং আবু হানিফ মিলে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে এবং নির্যাতন করছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই এবং ওরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে আমার পরিবার ও আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই।