Dhaka 10:51 pm, Sunday, 16 March 2025
‘পাচার হওয়া টাকা দিয়ে’ দেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে’

পাচারের টাকায় ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’

বাংলাদেশ থেকে ‘পাচার হওয়া টাকা দিয়ে’ দেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে’ বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদেরকে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা এই চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তার।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

সাক্ষাতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৮টি দেশের এবং ভারতের নয়াদিল্লিতে পাঁচটি মিশনের প্রধানরা অংশ নেন। ছিলেন আরও ছয়টি মিশনের কর্মকর্তারা।

তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫ জন প্রতিনিধি তাদের মতামত তুলে ধরেন।

বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে লেখা হয়, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এমন আলোচনায় অংশ নিতে পেরে ইউনূস ‘খুব আনন্দিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।

এ সময় তিনি গত ১৬ বছর ধরে ‘অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন’ সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে ‘দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং ব্যাংকিং সিস্টেমকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা’ হয়েছিল সেসব কথা জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘ব্যাপক আকারে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে’। এই ‘মিসইনফরমেশন’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতদের সহযোগিতাও কামনা করেছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে ‘পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরাচারী’ শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা যে ‘ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে’, তা দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘সব’ রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথাও বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানিয়েছেন ইউনূস।

বৈঠকে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ করা হয় বলেও জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।

ইউনূস বলেন, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।

বৈঠকে ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারস্টেনস।

দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধানদের মধ্যে ছিলেন, বাংলাদেশে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভান্ডারহাসেল্ট, বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই ইয়ানকোভ, এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রদূত মারিয়ে লুপ, লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত পেজি ফ্রান্টজেন, স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রদূত রবার্ট ম্যাক্সিয়ান, সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত ইভাগোরাস ভ্রায়োনাইডস।

ছিলেন নয়াদিল্লিতে হাঙ্গেরি দূতাবাসের বাংলাদেশ অফিসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, পোল্যান্ডের দূতাবাসের কনস্যুলার, পর্তুগাল দূতাবাসের হেড অব মিশন, স্লোভেনিয়া দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং নয়াদিল্লিতে রোমানিয়া দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারিও।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

‘পাচার হওয়া টাকা দিয়ে’ দেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে’

পাচারের টাকায় ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’

Update Time : 07:51:35 pm, Monday, 9 December 2024

বাংলাদেশ থেকে ‘পাচার হওয়া টাকা দিয়ে’ দেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে’ বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদেরকে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা এই চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তার।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

সাক্ষাতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ৮টি দেশের এবং ভারতের নয়াদিল্লিতে পাঁচটি মিশনের প্রধানরা অংশ নেন। ছিলেন আরও ছয়টি মিশনের কর্মকর্তারা।

তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৫ জন প্রতিনিধি তাদের মতামত তুলে ধরেন।

বৈঠকে শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে উভয়ের অঙ্গীকার ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে লেখা হয়, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এমন আলোচনায় অংশ নিতে পেরে ইউনূস ‘খুব আনন্দিত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।

এ সময় তিনি গত ১৬ বছর ধরে ‘অত্যাচার, শোষণ, বলপূর্বক গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন’ সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের বিষয় উল্লেখ করে ‘দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং ব্যাংকিং সিস্টেমকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা’ হয়েছিল সেসব কথা জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘ব্যাপক আকারে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে’। এই ‘মিসইনফরমেশন’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতদের সহযোগিতাও কামনা করেছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে ‘পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া স্বৈরাচারী’ শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা যে ‘ব্যাপক টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে’, তা দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘সব’ রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথাও বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও ইইউ প্রতিনিধিদের বিশদভাবে জানিয়েছেন ইউনূস।

বৈঠকে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ করা হয় বলেও জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।

ইউনূস বলেন, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর হলে বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।

বৈঠকে ঢাকায় ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারস্টেনস।

দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধানদের মধ্যে ছিলেন, বাংলাদেশে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভান্ডারহাসেল্ট, বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত নিকোলাই ইয়ানকোভ, এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রদূত মারিয়ে লুপ, লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত পেজি ফ্রান্টজেন, স্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রদূত রবার্ট ম্যাক্সিয়ান, সাইপ্রাসের রাষ্ট্রদূত ইভাগোরাস ভ্রায়োনাইডস।

ছিলেন নয়াদিল্লিতে হাঙ্গেরি দূতাবাসের বাংলাদেশ অফিসের ফার্স্ট সেক্রেটারি, পোল্যান্ডের দূতাবাসের কনস্যুলার, পর্তুগাল দূতাবাসের হেড অব মিশন, স্লোভেনিয়া দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং নয়াদিল্লিতে রোমানিয়া দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারিও।