Dhaka 8:37 pm, Friday, 14 March 2025

কুমিল্লায় দলিল লেখকের হাতে সাব রেজিস্ট্রার লাঞ্ছিত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সাব রেজিস্ট্রারকে লাঞ্চিত করার দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ৪ কর্মদিবস। এতে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দলিল দাতা, গ্রহীতা ও নকল দলিল উত্তোলনকারীরাসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহীতারা। সাব রেজিস্ট্রারের না আসার বিষয়ে পূর্বে না জানায় ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা গ্রহীতারা এসে নানান মন্তব্য করে ফিরে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক বলেন, দলিল লেখক ও দলিলের গ্রহীতা সাব রেজিস্ট্রারকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় তিনি গত ৪ই ফেব্রæয়ারী বুধবার থেকে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। চৌদ্দগ্রাম সাব-রেজিস্টার অফিস সূত্রে গেছে, চৌদ্দগ্রাম সাব-রেজিস্টার অফিস দলিল লেখক সমিতির অন্তর্ভুক্ত দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রæয়ারী) বিকেলে পৌরসভার ২২ শতক জায়গার দলিল সম্পাদনের জন্য সাব রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় প্রবেশ করেন। এসময় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্টার মেহেদী হাসান ত্রæটিপূর্ণ কাগজ দেখে ভেন্ডার হানিফকে শতভাগ নির্ভুল দলিল নিয়ে আসতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভেন্ডার সহ দলিল গ্রহীতা পৌরসভার চান্দিশকরার মোঃ শহীদ সাব-রেজিস্টারকে লাঞ্চিত করেন। এ ঘটনার জেরে ১০ই ফেব্রæয়ারী (সোমবার) পর্যন্ত সাব-রেজিস্টার কর্মস্থলে আসেননি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দলিল দাতা ও গ্রহীতারা। উল্লেখ্য, চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার ওমর ফারুক বদলিজনিত কারণে গত বছরের ২৩শে ডিসেম্বর চলে যাওয়ায় চৌদ্দগ্রাম অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন গুনবতী সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান। সরজমিনে সাব-রেজিস্টার অফিসে গিয়ে আরও দেখা যায়, ২২ শতক জায়গার কবলা দিতে আসা বুদ্দিন গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, ফরিদা বেগম গং জানান, ‘আমরা পূর্বনির্ধারিত বুধবার (৫ই ফেব্রæয়ারী) একটি দলিল সম্পাদনের জন্য এসেছিলাম ঢাকা থেকে। কিন্তু এখানে জানলাম অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় সাব-রেজিস্টার অনুপস্থিত। কর্মসূত্রে আমরা সবাই ঢাকা থাকি, মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকা থেকে এসেছি, এখন দলিল সম্পাদন না করেই ফিরে যেতে হবে।’

উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের আলকরা গ্রাম থেকে আসা আবদুল মমিন বলেন, ‘টাকার জন্য জমি বিক্রি করেছি, কিন্তু আজকে সাব-রেজিস্টার না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। জমি রেজিস্টি ছাড়া ক্রেতা টাকা দিচ্ছেনা। বিপদের সময় টাকা-ই যদি না পাই তাহলে জমি বিক্রি করে কী লাভ হলো! ঘোলপাশা ইউনিয়নের কোমাল্লা গ্রাম থেকে নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য ক্রয়কৃত জমির দলিল সম্পাদন করতে আসা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘চাকরিসূত্রে এলাকার বাইরে থাকি। ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। সন্তানদের তাগাদায় একটি নতুন বাড়ি করার জন্য বৃহস্পতিবার ( ০৬ই ফেব্রæয়ারী) দলিল সম্পাদন করতে এসে ফিরে যাচ্ছি। দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার আমার দুইটি দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা ছিল। যার একটি বন্টননামা। বন্টননামার একজন অংশীদার আগামীকাল দেশের বাইরে চলে যাবে। কয়েকজন আসছেন শহর থেকে। এমন পরিস্থিতিতে সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ।’ তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, তবে অফিসে এসে জেনেছি সাব-রেজিস্টার স্যারের কোনো দোষ ছিল না। ঘটনাস্থলে বহিরাগত লোকজন এসে স্যারকে লাঞ্চিত করে।’
আরেক দলিল লেখক মোহাম্মদ রায়হান জানান, সাব রেজিস্ট্রারে সাথে দুর্ব্যবহারের কারণে তিনি অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি। দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দলিল গ্রহীতাগণের সাথে সাব রেজিস্ট্রারের ঝামেলা হয়েছে। ঐদিন ঘটনার সময়ে সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন ও দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছিলেন। আমি তাকে লাঞ্চিত করি নাই। সম্ভবত ব্যক্তিগত কারণে তিনি (সাব রেজিস্ট্রার) আসছেন না। চৌদ্দগ্রাম দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন জানান, সন্ধার পরে হওয়ায় ঐদিন (৪ই ফেব্রæয়ারী) আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে জেনেছি। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি। চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান (অতি: দায়িত্ব) জানান, এখানে কাজ করার বিষয়ে মনমানসিকতা নাই। আমি ইতোমধ্যেই বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার মহোদয়কে জানিয়েছি। আমি এখন থেকে নিয়মিত গুনবতী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করবো। জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান বলেন, মেহেদী হাসান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করছে। গত ৪ই ফেব্রæয়ারী মঙ্গলবার জনৈক দলিল লিখক ও তার দলিলের গ্রহীতা কর্তৃক মেহেদী হাসানকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অনেকেই (সাব রেজিস্ট্রার) আসতে রাজি হচ্ছেন না। আশা করছি দ্রতই সমস্যার সমাধান হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

কুমিল্লায় দলিল লেখকের হাতে সাব রেজিস্ট্রার লাঞ্ছিত

Update Time : 10:09:57 pm, Monday, 10 February 2025

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সাব রেজিস্ট্রারকে লাঞ্চিত করার দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ৪ কর্মদিবস। এতে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দলিল দাতা, গ্রহীতা ও নকল দলিল উত্তোলনকারীরাসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহীতারা। সাব রেজিস্ট্রারের না আসার বিষয়ে পূর্বে না জানায় ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা গ্রহীতারা এসে নানান মন্তব্য করে ফিরে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক বলেন, দলিল লেখক ও দলিলের গ্রহীতা সাব রেজিস্ট্রারকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় তিনি গত ৪ই ফেব্রæয়ারী বুধবার থেকে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। চৌদ্দগ্রাম সাব-রেজিস্টার অফিস সূত্রে গেছে, চৌদ্দগ্রাম সাব-রেজিস্টার অফিস দলিল লেখক সমিতির অন্তর্ভুক্ত দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রæয়ারী) বিকেলে পৌরসভার ২২ শতক জায়গার দলিল সম্পাদনের জন্য সাব রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় প্রবেশ করেন। এসময় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্টার মেহেদী হাসান ত্রæটিপূর্ণ কাগজ দেখে ভেন্ডার হানিফকে শতভাগ নির্ভুল দলিল নিয়ে আসতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভেন্ডার সহ দলিল গ্রহীতা পৌরসভার চান্দিশকরার মোঃ শহীদ সাব-রেজিস্টারকে লাঞ্চিত করেন। এ ঘটনার জেরে ১০ই ফেব্রæয়ারী (সোমবার) পর্যন্ত সাব-রেজিস্টার কর্মস্থলে আসেননি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দলিল দাতা ও গ্রহীতারা। উল্লেখ্য, চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার ওমর ফারুক বদলিজনিত কারণে গত বছরের ২৩শে ডিসেম্বর চলে যাওয়ায় চৌদ্দগ্রাম অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন গুনবতী সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান। সরজমিনে সাব-রেজিস্টার অফিসে গিয়ে আরও দেখা যায়, ২২ শতক জায়গার কবলা দিতে আসা বুদ্দিন গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, ফরিদা বেগম গং জানান, ‘আমরা পূর্বনির্ধারিত বুধবার (৫ই ফেব্রæয়ারী) একটি দলিল সম্পাদনের জন্য এসেছিলাম ঢাকা থেকে। কিন্তু এখানে জানলাম অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় সাব-রেজিস্টার অনুপস্থিত। কর্মসূত্রে আমরা সবাই ঢাকা থাকি, মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকা থেকে এসেছি, এখন দলিল সম্পাদন না করেই ফিরে যেতে হবে।’

উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের আলকরা গ্রাম থেকে আসা আবদুল মমিন বলেন, ‘টাকার জন্য জমি বিক্রি করেছি, কিন্তু আজকে সাব-রেজিস্টার না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। জমি রেজিস্টি ছাড়া ক্রেতা টাকা দিচ্ছেনা। বিপদের সময় টাকা-ই যদি না পাই তাহলে জমি বিক্রি করে কী লাভ হলো! ঘোলপাশা ইউনিয়নের কোমাল্লা গ্রাম থেকে নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য ক্রয়কৃত জমির দলিল সম্পাদন করতে আসা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘চাকরিসূত্রে এলাকার বাইরে থাকি। ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। সন্তানদের তাগাদায় একটি নতুন বাড়ি করার জন্য বৃহস্পতিবার ( ০৬ই ফেব্রæয়ারী) দলিল সম্পাদন করতে এসে ফিরে যাচ্ছি। দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার আমার দুইটি দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা ছিল। যার একটি বন্টননামা। বন্টননামার একজন অংশীদার আগামীকাল দেশের বাইরে চলে যাবে। কয়েকজন আসছেন শহর থেকে। এমন পরিস্থিতিতে সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ।’ তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, তবে অফিসে এসে জেনেছি সাব-রেজিস্টার স্যারের কোনো দোষ ছিল না। ঘটনাস্থলে বহিরাগত লোকজন এসে স্যারকে লাঞ্চিত করে।’
আরেক দলিল লেখক মোহাম্মদ রায়হান জানান, সাব রেজিস্ট্রারে সাথে দুর্ব্যবহারের কারণে তিনি অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি। দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দলিল গ্রহীতাগণের সাথে সাব রেজিস্ট্রারের ঝামেলা হয়েছে। ঐদিন ঘটনার সময়ে সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন ও দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছিলেন। আমি তাকে লাঞ্চিত করি নাই। সম্ভবত ব্যক্তিগত কারণে তিনি (সাব রেজিস্ট্রার) আসছেন না। চৌদ্দগ্রাম দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন জানান, সন্ধার পরে হওয়ায় ঐদিন (৪ই ফেব্রæয়ারী) আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে জেনেছি। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি। চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান (অতি: দায়িত্ব) জানান, এখানে কাজ করার বিষয়ে মনমানসিকতা নাই। আমি ইতোমধ্যেই বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার মহোদয়কে জানিয়েছি। আমি এখন থেকে নিয়মিত গুনবতী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করবো। জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান বলেন, মেহেদী হাসান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করছে। গত ৪ই ফেব্রæয়ারী মঙ্গলবার জনৈক দলিল লিখক ও তার দলিলের গ্রহীতা কর্তৃক মেহেদী হাসানকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অনেকেই (সাব রেজিস্ট্রার) আসতে রাজি হচ্ছেন না। আশা করছি দ্রতই সমস্যার সমাধান হবে।