
দ্রুত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও আবাদযোগ্য জমির সংকটের কারণে বাংলাদেশে টেকসই কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা আজ বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই প্রেক্ষাপটে নগর কৃষির বিকল্প পথ হিসেবে বস্তাভিত্তিক আদা চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বস্তাভিত্তিক আদা চাষ স্থান সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব এবং সহজলভ্য একটি পদ্ধতি। নগরের অব্যবহৃত স্থান— যেমন ফুটপাত, ড্রেনের উপরিভাগ, ছাদ, সৌর প্যানেলের নিচের জায়গা, বারান্দা ও সড়ক বিভাজক ব্যবহার করে সহজেই আদা চাষ করা যায়। এতে নগর সবুজায়ন বাড়ে, তাপদ্বীপ প্রভাব কমে এবং বায়ুদূষণ হ্রাস পায়।
এই পদ্ধতিতে কম খরচে পুরাতন বস্তা ও জৈব সার ব্যবহার করে উৎপাদন করা সম্ভব। এতে গৃহস্থালির বর্জ্যও পুনর্ব্যবহার হয়, ফলে ল্যান্ডফিলের চাপ কমে। পাশাপাশি, নগরবাসী তাজা ও কীটনাশকমুক্ত আদার সহজ প্রাপ্তির সুবিধা পায়, বাজারের ওপর নির্ভরতা কমে এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়।
অর্থনৈতিকভাবে বস্তাভিত্তিক আদা চাষ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, স্বল্প খরচে অধিক ফলন এবং নগরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে নারীদের আর্থিক স্বনির্ভরতা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টি উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিবেশগত দিক থেকেও এই চাষ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। এটি শহরের সবুজ পরিমাণ বাড়িয়ে পরিবেশের গুণগত মান উন্নত করে, কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বাতাস বিশুদ্ধ করে এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করে। একই সঙ্গে বন্যা বা খরার মতো জলবায়ু সংকটে অভিযোজনেও সহায়ক ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সঠিক প্রশিক্ষণ, কৌশলগত বাস্তবায়ন ও নীতিগত সহায়তা পেলে বস্তাভিত্তিক আদা চাষ নগর কৃষিতে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। এতে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জলবায়ু সহনশীল সবুজ নগর গঠনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।