Dhaka 7:39 am, Monday, 28 April 2025

মালিবাগে ‘মাদক ও নারীচক্রে’ ঘেরা আবাসিক হোটেল: নেই প্রশাসনের চোখ রাঙানি!

আবাসিক হোটেল

রাজধানীর রামপুরা থানাধীন মালিবাগ এলাকায় ‘হোটেল’ নামক একটি শব্দ আজ যেন অন্ধকার চক্রের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অবৈধ আবাসিক হোটেলগুলো এখন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন চলে আসছে এসব অপকর্ম, অথচ কার্যত ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব হোটেল যেন একেকটি ‘হাস্যকর অপরাধকেন্দ্র’ হয়ে উঠেছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। চারদিকে চোখে পড়ে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা। এই হোটেলগুলোতেই চলেছে কলগার্লের ছদ্মবেশে ভিআইপি সার্ভিসের নামে ‘নীলাখেলা’। হোটেল ইসলামি ও হোটেল আল-ইসলামের এক মালিক স্পষ্টভাবেই স্বীকার করেছেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ও পুলিশের সঙ্গে ‘ম্যানেজমেন্ট’ ছাড়া এই ব্যবসা সম্ভব নয়। এমন বক্তব্য শুনে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তবে কি প্রশাসন-রাজনীতির ছত্রছায়ায়ই এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে? শুধু নারী নয়, মাদক সিন্ডিকেটও হোটেল ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। তবে হোটেল সবুজ বাংলার মালিক বিষয়টি এড়িয়ে যান। অখচ দেধারছে চলছে নারী বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম। এসব হোটেল ঘিরে স্থানীয় যুব সমাজ দিনদিন অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ছে। চুরি, ছিনতাই, খুন কিংবা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের পিছনেও রয়েছে এই হোটেলগুলোর ছায়া।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, হোটেলগুলোতে দিন-রাত চলা অপকর্মের কারণে পরিবার নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি পেতে হয় সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষকে। হোটেলগুলোর মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এসব চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তাদের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চক্র। আবাসিক হোটেল চালানোর জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমোদন, ফায়ার সার্ভিস ছাড়পত্র, ও সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন থাকা বাধ্যতামূলক হলেও, অধিকাংশ হোটেলের রয়েছে শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স। সেটিও মূলত শুধু লোক দেখানো। প্রকাশ্যে এমন আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড চললেও রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জকে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি, যা আরও রহস্য বাড়িয়ে দেয়।

এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি এই ধরনের কর্মকাণ্ড দমন না হলে সমাজে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাবে। পুলিশের উচিত এসব অপরাধীদের কঠোর হাতে দমন করা। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি একযোগে কাজ করে, তবে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সত্য। এখন সময় এসেছে প্রশাসনের সদিচ্ছার। মালিবাগের মতো জনবহুল এলাকায় যদি এসব হোটেল রুখে দেওয়া না যায়, তবে অচিরেই রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ
বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

মালিবাগে ‘মাদক ও নারীচক্রে’ ঘেরা আবাসিক হোটেল: নেই প্রশাসনের চোখ রাঙানি!

Update Time : 03:25:37 pm, Sunday, 20 April 2025

রাজধানীর রামপুরা থানাধীন মালিবাগ এলাকায় ‘হোটেল’ নামক একটি শব্দ আজ যেন অন্ধকার চক্রের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অবৈধ আবাসিক হোটেলগুলো এখন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন চলে আসছে এসব অপকর্ম, অথচ কার্যত ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব হোটেল যেন একেকটি ‘হাস্যকর অপরাধকেন্দ্র’ হয়ে উঠেছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। চারদিকে চোখে পড়ে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা। এই হোটেলগুলোতেই চলেছে কলগার্লের ছদ্মবেশে ভিআইপি সার্ভিসের নামে ‘নীলাখেলা’। হোটেল ইসলামি ও হোটেল আল-ইসলামের এক মালিক স্পষ্টভাবেই স্বীকার করেছেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ও পুলিশের সঙ্গে ‘ম্যানেজমেন্ট’ ছাড়া এই ব্যবসা সম্ভব নয়। এমন বক্তব্য শুনে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, তবে কি প্রশাসন-রাজনীতির ছত্রছায়ায়ই এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে? শুধু নারী নয়, মাদক সিন্ডিকেটও হোটেল ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। তবে হোটেল সবুজ বাংলার মালিক বিষয়টি এড়িয়ে যান। অখচ দেধারছে চলছে নারী বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম। এসব হোটেল ঘিরে স্থানীয় যুব সমাজ দিনদিন অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ছে। চুরি, ছিনতাই, খুন কিংবা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের পিছনেও রয়েছে এই হোটেলগুলোর ছায়া।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, হোটেলগুলোতে দিন-রাত চলা অপকর্মের কারণে পরিবার নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি পেতে হয় সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষকে। হোটেলগুলোর মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এসব চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তাদের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চক্র। আবাসিক হোটেল চালানোর জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমোদন, ফায়ার সার্ভিস ছাড়পত্র, ও সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন থাকা বাধ্যতামূলক হলেও, অধিকাংশ হোটেলের রয়েছে শুধুমাত্র একটি ট্রেড লাইসেন্স। সেটিও মূলত শুধু লোক দেখানো। প্রকাশ্যে এমন আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড চললেও রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জকে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি, যা আরও রহস্য বাড়িয়ে দেয়।

এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি এই ধরনের কর্মকাণ্ড দমন না হলে সমাজে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাবে। পুলিশের উচিত এসব অপরাধীদের কঠোর হাতে দমন করা। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিটি কর্পোরেশন, ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি একযোগে কাজ করে, তবে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সত্য। এখন সময় এসেছে প্রশাসনের সদিচ্ছার। মালিবাগের মতো জনবহুল এলাকায় যদি এসব হোটেল রুখে দেওয়া না যায়, তবে অচিরেই রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের সিন্ডিকেট মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।