Dhaka 10:56 pm, Sunday, 27 April 2025

মিরপুরে হোটেল আল মামুনে প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার প্রশ্ন: ধরাছোঁয়ার বাইরে মামুন-নান্টু

হোটেল মালিক মামুন ও ম্যানেজার নান্টু

মিরপুরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা বাগদাদ শপিং মলের ১০ম তলায় অবস্থিত হোটেল আল মামুন যেন এক গোপন অপরাধজগতের সদরদফতর হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং সচেতন মহলের অভিযোগ, দিনের আলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে এই হোটেলেই সংঘটিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর অপরাধ মাদক ব্যবসা, নারী পাচার ও যৌন বাণিজ্য। অথচ প্রশাসনের ভূমিকা স্পষ্টতই অনুপস্থিত। স্থানীয়রা বলছেন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ, এমনকি উঠতি মডেলদেরও এই চক্রের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। হোটেলটির অভ্যন্তরে রুম সার্ভিসের আড়ালে চলছে এসব অপরাধ, যেখানে প্রশাসনের নীরবতা যেন এক অদৃশ্য অনুমতির ইঙ্গিত দেয়। হোটেলটির মালিক মামুন, যার নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’—বর্তমানে মিরপুরের অনেকের কাছে আতঙ্কের প্রতীক। অভিযোগ অনুযায়ী, মামুনের ছত্রছায়ায় সক্রিয় একাধিক দালাল প্রতিদিনই নারীদের সরবরাহ এবং মাদকের আয়োজন করে থাকে।

এছাড়া, হোটেলের ১১ তলায় অবস্থিত একটি বারের মাধ্যমেই সরবরাহ করা হয় মদ, গাঁজা ও ইয়াবা। রাত বাড়ার সাথে সাথে জমে ওঠে এসব অবৈধ আসর, যেখানে সামিল হন হোটেল কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, হোটেলটির নিকটেই রয়েছে বেঙ্গলি হাই স্কুল এবং আন-নূরী জামে মসজিদ। একটি শিক্ষা ও ধর্মীয় এলাকার এমন কাছাকাছি এই ধরণের কর্মকাণ্ড চলা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যেখানে এমন স্পষ্ট ও নিরবচ্ছিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেখানেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকাকে ঘিরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু সদস্য নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে চোখ বুজে আছেন।

এবিষয়ে হোটেলের ম্যানেজার নান্টুর স্বীকারোক্তি আরও ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরে। তিনি নিজেই বলেছেন, “এসব ব্যবসা করতে হলে থানার ওসিদের ম্যানেজ করতে হয়, মাসোহারা যায় প্রশাসনে। এই বক্তব্য শুধু একটি হোটেল বা একটি এলাকার চিত্রই তুলে ধরে না, বরং দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া—জনমনে সৃষ্টি করেছে একধরনের অসহায়তা ও ক্ষোভ।
হোটেল আল মামুনকে ঘিরে এমন ভয়ঙ্কর অপরাধচক্র, যেখানে ‘ম’ অক্ষরটি মুখোশ হয়ে উঠেছে অপরাধের প্রতীক, সেখানে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা এখন সময়ের দাবি। নাগরিকদের নিরাপত্তা ও নৈতিক সমাজব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে প্রয়োজন শক্ত অবস্থান ও কঠোর ব্যবস্থা। নয়তো এমন গোপন জগত আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজকে গ্রাস করবেই।

এবিষয়ে শাহা আলী থানার অফিসার ইনচার্জের নিকট তথ্য প্রদান করলে তিনি দৈনিক সংবাদ দিগন্তের গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, এসব দেখার সময় ন নেই এবং তার কথাবার্তায় মনে হলো তার সাথে অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আপনারা যা পারেন লিখেন এবং আমি আমার কাজ করবো। বিষয়টি সন্ধেহজনক হলে অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে উঠে আসে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ।

অন্যদিকে এবিষয়ে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া উক্ত ওসির বিষয়টি পুলিশ কমিশনারের নিকট বলা হলে তিনি সন্তোষজনক বক্তব্য পেশ করেন। তাছাড়া আমার আপনাদের পারস্পরিক বন্ধু এবং বিষয়টি আমি দেখছি। (পর্ব-২)

 

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ
বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

মিরপুরে হোটেল আল মামুনে প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার প্রশ্ন: ধরাছোঁয়ার বাইরে মামুন-নান্টু

Update Time : 11:58:03 pm, Monday, 14 April 2025

মিরপুরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা বাগদাদ শপিং মলের ১০ম তলায় অবস্থিত হোটেল আল মামুন যেন এক গোপন অপরাধজগতের সদরদফতর হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং সচেতন মহলের অভিযোগ, দিনের আলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে এই হোটেলেই সংঘটিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর অপরাধ মাদক ব্যবসা, নারী পাচার ও যৌন বাণিজ্য। অথচ প্রশাসনের ভূমিকা স্পষ্টতই অনুপস্থিত। স্থানীয়রা বলছেন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচিত মুখ, এমনকি উঠতি মডেলদেরও এই চক্রের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। হোটেলটির অভ্যন্তরে রুম সার্ভিসের আড়ালে চলছে এসব অপরাধ, যেখানে প্রশাসনের নীরবতা যেন এক অদৃশ্য অনুমতির ইঙ্গিত দেয়। হোটেলটির মালিক মামুন, যার নামের প্রথম অক্ষর ‘ম’—বর্তমানে মিরপুরের অনেকের কাছে আতঙ্কের প্রতীক। অভিযোগ অনুযায়ী, মামুনের ছত্রছায়ায় সক্রিয় একাধিক দালাল প্রতিদিনই নারীদের সরবরাহ এবং মাদকের আয়োজন করে থাকে।

এছাড়া, হোটেলের ১১ তলায় অবস্থিত একটি বারের মাধ্যমেই সরবরাহ করা হয় মদ, গাঁজা ও ইয়াবা। রাত বাড়ার সাথে সাথে জমে ওঠে এসব অবৈধ আসর, যেখানে সামিল হন হোটেল কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, হোটেলটির নিকটেই রয়েছে বেঙ্গলি হাই স্কুল এবং আন-নূরী জামে মসজিদ। একটি শিক্ষা ও ধর্মীয় এলাকার এমন কাছাকাছি এই ধরণের কর্মকাণ্ড চলা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। যেখানে এমন স্পষ্ট ও নিরবচ্ছিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সেখানেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকাকে ঘিরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু সদস্য নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে চোখ বুজে আছেন।

এবিষয়ে হোটেলের ম্যানেজার নান্টুর স্বীকারোক্তি আরও ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরে। তিনি নিজেই বলেছেন, “এসব ব্যবসা করতে হলে থানার ওসিদের ম্যানেজ করতে হয়, মাসোহারা যায় প্রশাসনে। এই বক্তব্য শুধু একটি হোটেল বা একটি এলাকার চিত্রই তুলে ধরে না, বরং দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া—জনমনে সৃষ্টি করেছে একধরনের অসহায়তা ও ক্ষোভ।
হোটেল আল মামুনকে ঘিরে এমন ভয়ঙ্কর অপরাধচক্র, যেখানে ‘ম’ অক্ষরটি মুখোশ হয়ে উঠেছে অপরাধের প্রতীক, সেখানে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা এখন সময়ের দাবি। নাগরিকদের নিরাপত্তা ও নৈতিক সমাজব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে প্রয়োজন শক্ত অবস্থান ও কঠোর ব্যবস্থা। নয়তো এমন গোপন জগত আমাদের ভবিষ্যৎ সমাজকে গ্রাস করবেই।

এবিষয়ে শাহা আলী থানার অফিসার ইনচার্জের নিকট তথ্য প্রদান করলে তিনি দৈনিক সংবাদ দিগন্তের গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, এসব দেখার সময় ন নেই এবং তার কথাবার্তায় মনে হলো তার সাথে অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আপনারা যা পারেন লিখেন এবং আমি আমার কাজ করবো। বিষয়টি সন্ধেহজনক হলে অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে উঠে আসে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ।

অন্যদিকে এবিষয়ে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া উক্ত ওসির বিষয়টি পুলিশ কমিশনারের নিকট বলা হলে তিনি সন্তোষজনক বক্তব্য পেশ করেন। তাছাড়া আমার আপনাদের পারস্পরিক বন্ধু এবং বিষয়টি আমি দেখছি। (পর্ব-২)