Dhaka 12:56 am, Monday, 17 March 2025

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল: চিকিৎসা সংকটের পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে চরম ভোগান্তি

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ সংকট ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের পাশাপাশি রোগীদের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। হাসপাতালের প্রতিটি কর্নার কানায় কানায় রোগীতে পূর্ণ। চলাচলের জন্য পা ফেলার জায়গাও প্রায় নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে বেশিরভাগ রোগীই তাদের চাহিদা মতো ওষুধ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত ও হার্টের রোগীর ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটিতে ৬১ ধরনের ওষুধের মধ্যে বর্তমানে ২৬ ধরনের ওষুধের কোনো সরবরাহ নেই। সেই সঙ্গে ফিল্ম সংকটের কারণে বিগত এক মাস ধরে বন্ধ ডিজিটাল এক্স-রে। হাসপাতালের বাইরে থেকে অতিপ্রয়োজনীয় এ পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
এত রোগীর চাপ সামলানোর মতো পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা এবং দুর্গন্ধ। বিশেষ করে টয়লেট ও ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে রোগীদের পাশাপাশি তাদের স্বজনরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
পর্যবেক্ষক ও ক্লিনারদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং যথাযথ তদারকির অভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিবেশের এই অবস্থার কারণে তারা নিজেদের আরও বেশি অসুস্থ বোধ করছেন।
এক রোগীর অভিভাবক নাজমুল  জানান, “চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসে এখন মনে হচ্ছে আরও বড় রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। দুর্গন্ধ এবং নোংরা পরিবেশে থাকা একেবারেই অসম্ভব।”
হাসপাতালে আসা নাসিম আহম্মেদ  জানান, আমি হাসপাতালে আমার রোগীকে এক্সরে করতে গেলে হাসপাতাল  কর্তৃপক্ষ জানান এক্সরে রিপোর্টের ফিল্ম নাই।বাইরে থেকে করে নিবেন বলে তারা জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালের এই দুরবস্থা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পাশাপাশি জনমনে হাসপাতালের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হবে।
সেখানে দায়িত্বরত কম্পিউটার অপারেটর কৃষ্ণ কুমার জানান, ফিল্মের অভাবে মাসখানেক ধরে ডিজিটাল এক্স-রে বন্ধ। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কেউ আসে বলে মনে হলো না। অথচ ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে তাপস কুমার সরকার বলেন, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের চারটি জেলার প্রায় এক হাজার মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে ভিড় জমান। অথচ আমরা বরাদ্দ পাই ২৫০ শয্যা হাসপাতালের। এজন্য ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকটে পড়তে হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ফিল্ম চলে এলে ডিজিটাল এক্স-রে শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা। তবে কবে ওষুধের সংকট কাটবে এ বিষয়ে তেমন কোনো আশার সংবাদ তিনি দিতে পারেননি।
ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি, পর্যাপ্ত ক্লিনিং স্টাফ নিয়োগ, এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে এই পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল: চিকিৎসা সংকটের পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে চরম ভোগান্তি

Update Time : 03:58:22 pm, Sunday, 8 December 2024
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ সংকট ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের পাশাপাশি রোগীদের জন্য আরেকটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। হাসপাতালের প্রতিটি কর্নার কানায় কানায় রোগীতে পূর্ণ। চলাচলের জন্য পা ফেলার জায়গাও প্রায় নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, বহির্বিভাগে বেশিরভাগ রোগীই তাদের চাহিদা মতো ওষুধ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ঠান্ডাজনিত ও হার্টের রোগীর ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটিতে ৬১ ধরনের ওষুধের মধ্যে বর্তমানে ২৬ ধরনের ওষুধের কোনো সরবরাহ নেই। সেই সঙ্গে ফিল্ম সংকটের কারণে বিগত এক মাস ধরে বন্ধ ডিজিটাল এক্স-রে। হাসপাতালের বাইরে থেকে অতিপ্রয়োজনীয় এ পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
এত রোগীর চাপ সামলানোর মতো পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা এবং দুর্গন্ধ। বিশেষ করে টয়লেট ও ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে রোগীদের পাশাপাশি তাদের স্বজনরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
পর্যবেক্ষক ও ক্লিনারদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং যথাযথ তদারকির অভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের পরিবেশের এই অবস্থার কারণে তারা নিজেদের আরও বেশি অসুস্থ বোধ করছেন।
এক রোগীর অভিভাবক নাজমুল  জানান, “চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসে এখন মনে হচ্ছে আরও বড় রোগ নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। দুর্গন্ধ এবং নোংরা পরিবেশে থাকা একেবারেই অসম্ভব।”
হাসপাতালে আসা নাসিম আহম্মেদ  জানান, আমি হাসপাতালে আমার রোগীকে এক্সরে করতে গেলে হাসপাতাল  কর্তৃপক্ষ জানান এক্সরে রিপোর্টের ফিল্ম নাই।বাইরে থেকে করে নিবেন বলে তারা জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালের এই দুরবস্থা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পাশাপাশি জনমনে হাসপাতালের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হবে।
সেখানে দায়িত্বরত কম্পিউটার অপারেটর কৃষ্ণ কুমার জানান, ফিল্মের অভাবে মাসখানেক ধরে ডিজিটাল এক্স-রে বন্ধ। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কেউ আসে বলে মনে হলো না। অথচ ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে তাপস কুমার সরকার বলেন, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের চারটি জেলার প্রায় এক হাজার মানুষ প্রতিদিন চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে ভিড় জমান। অথচ আমরা বরাদ্দ পাই ২৫০ শয্যা হাসপাতালের। এজন্য ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকটে পড়তে হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ফিল্ম চলে এলে ডিজিটাল এক্স-রে শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা। তবে কবে ওষুধের সংকট কাটবে এ বিষয়ে তেমন কোনো আশার সংবাদ তিনি দিতে পারেননি।
ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি, পর্যাপ্ত ক্লিনিং স্টাফ নিয়োগ, এবং কার্যকর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে এই পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব।