Dhaka 1:26 pm, Saturday, 15 March 2025

যুবলীগ নেতা হারুনের ভয়াবহ নির্যাতন,  ঘরবাড়ি ছাড়া ২ পরিবার

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হারুন রশিদ নামে এক যুবলীগ নেতার ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফারহানা ইয়াসমিন নামের এক গৃহবধু। তার সাথে অঝোরে কেঁদেছেন তাদেরই সন্তান সেগুফতা ইসলাম তুলি (১৫) ও আশরাফুল ইসলাম তোহা (১০)। অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা হারুন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের উত্তর শ্রীপুর এলাকার মৃত শাহজাহান মজুমদারের ছেলে।
রোববার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে স্থানীয় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগি বিধবা রৌশন আরা বেগমের পক্ষে তার দেবরের স্ত্রী গৃহবধু ফারহানা ইয়াসমিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, মনে করেছিলাম ৫ আগস্টের পর এদেশ থেকে আওয়ামী সকল দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। কিন্তু দেখা গেলো তার উল্টো চিত্র। স্থানীয় যুবলীগ নেতা হারুন রশিদের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ তদের ভ‚মি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ চলে আসছে। ক্ষমতায় থাকাকালিন যুবলীগ নেতা হারুন একাধিকবার তাদের পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে নির্যাতন করেছিলেন। তখনও এর প্রতিকার তারা কোথাও পায়নি। পূর্বের বিরোধের জের ধরে গত ২ ডিসেম্বর যুবলীগ নেতা হারুনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তাদের বাড়িঘর, ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এ সময় গৃহবধু আরও উল্লেখ করে বলেন, যুবলীগ নেতা হারুন রশিদ ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা আমার পরনের কাপড় নিয়ে টানাহেছড়া সহ শ্লীলতাহানী ও শারীরিক নির্যাতনের চেষ্টা করে। হাতে অস্ত্র নিয়ে বারবার আমাদের দিকে ধেয়ে আসে। তারা আমার কোমলমতি দুই সন্তান সেগুফতা ইসলাম তুলি ও আশরাফুল ইসলাম, বড় ঝা রৌশন আরা বেগমকে ঘরের ভেতরে রেখে তালা মেরে দেয়। তাৎক্ষণিক আমরা জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ এ কল করলে থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আমাদেরকে ঘর থেকে বের হতে সাহায্য করে। লিখিত বক্তব্যে গৃহবধু আরও উল্লেখ করেন, এতেও যুবলীগ নেতা হারুন রশিদ ক্ষান্ত না হয়ে আমার দুই সন্তানকে স্কুলে যেতে ও বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধা প্রদান এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত কে জানালে তাঁর সহযোগিতায় আমার সন্তানরা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। গৃহবধু কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, আমরা হারুন এর অত্যাচারে গত ২ ডিসেম্বর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেছি। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট অভিযোগ দেওয়াতে তারা আরও বেশি ক্ষীপ্ত হয়। তার বাহিনীর ভয়ে পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা হারুন রশিদ মজুমদারের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কলটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ.টি.এম আক্তার উজ জামান বলেন, ‘গৃহবধুর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ৪ বার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ভুক্তভোগির পরিবারকে আইনী সহায়তা প্রদান করেছে। আমরা গৃহবধুকে থানায় আসতে বললেও তিনি এখন আর থানায় আসছেন না।’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

যুবলীগ নেতা হারুনের ভয়াবহ নির্যাতন,  ঘরবাড়ি ছাড়া ২ পরিবার

Update Time : 08:48:03 pm, Sunday, 8 December 2024
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হারুন রশিদ নামে এক যুবলীগ নেতার ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফারহানা ইয়াসমিন নামের এক গৃহবধু। তার সাথে অঝোরে কেঁদেছেন তাদেরই সন্তান সেগুফতা ইসলাম তুলি (১৫) ও আশরাফুল ইসলাম তোহা (১০)। অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা হারুন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের উত্তর শ্রীপুর এলাকার মৃত শাহজাহান মজুমদারের ছেলে।
রোববার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে স্থানীয় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগি বিধবা রৌশন আরা বেগমের পক্ষে তার দেবরের স্ত্রী গৃহবধু ফারহানা ইয়াসমিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, মনে করেছিলাম ৫ আগস্টের পর এদেশ থেকে আওয়ামী সকল দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। কিন্তু দেখা গেলো তার উল্টো চিত্র। স্থানীয় যুবলীগ নেতা হারুন রশিদের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ তদের ভ‚মি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধ চলে আসছে। ক্ষমতায় থাকাকালিন যুবলীগ নেতা হারুন একাধিকবার তাদের পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে নির্যাতন করেছিলেন। তখনও এর প্রতিকার তারা কোথাও পায়নি। পূর্বের বিরোধের জের ধরে গত ২ ডিসেম্বর যুবলীগ নেতা হারুনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তাদের বাড়িঘর, ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এ সময় গৃহবধু আরও উল্লেখ করে বলেন, যুবলীগ নেতা হারুন রশিদ ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা আমার পরনের কাপড় নিয়ে টানাহেছড়া সহ শ্লীলতাহানী ও শারীরিক নির্যাতনের চেষ্টা করে। হাতে অস্ত্র নিয়ে বারবার আমাদের দিকে ধেয়ে আসে। তারা আমার কোমলমতি দুই সন্তান সেগুফতা ইসলাম তুলি ও আশরাফুল ইসলাম, বড় ঝা রৌশন আরা বেগমকে ঘরের ভেতরে রেখে তালা মেরে দেয়। তাৎক্ষণিক আমরা জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ এ কল করলে থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে আমাদেরকে ঘর থেকে বের হতে সাহায্য করে। লিখিত বক্তব্যে গৃহবধু আরও উল্লেখ করেন, এতেও যুবলীগ নেতা হারুন রশিদ ক্ষান্ত না হয়ে আমার দুই সন্তানকে স্কুলে যেতে ও বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধা প্রদান এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত কে জানালে তাঁর সহযোগিতায় আমার সন্তানরা বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়। গৃহবধু কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, আমরা হারুন এর অত্যাচারে গত ২ ডিসেম্বর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেছি। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট অভিযোগ দেওয়াতে তারা আরও বেশি ক্ষীপ্ত হয়। তার বাহিনীর ভয়ে পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা হারুন রশিদ মজুমদারের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কলটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ.টি.এম আক্তার উজ জামান বলেন, ‘গৃহবধুর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ৪ বার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ভুক্তভোগির পরিবারকে আইনী সহায়তা প্রদান করেছে। আমরা গৃহবধুকে থানায় আসতে বললেও তিনি এখন আর থানায় আসছেন না।’