Dhaka 11:39 pm, Friday, 9 May 2025

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষায় সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ

সাংবাদিক হয়রানিতে জেল জরিমানা

সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে প্রণীত এই খসড়া অধ্যাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে সাংবাদিকদের হয়রানি, হুমকি বা সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

খসড়া অনুযায়ী, কেউ যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকের ওপর সহিংসতা চালায়, হুমকি দেয় কিংবা হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানার অর্থ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে মিথ্যা অভিযোগের ক্ষেত্রেও রয়েছে শাস্তি। যদি কোনো সাংবাদিক প্রমাণসহ মিথ্যা অভিযোগ করেন, তবে তার জন্যও এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

অধ্যাদেশের আওতায় ‘সাংবাদিক’ বলতে সম্পাদক থেকে শুরু করে রিপোর্টার, কপি টেস্টার, কার্টুনিস্ট, সংবাদ চিত্রগ্রাহক, এমনকি খণ্ডকালীন বা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। বাংলাভাষার পাশাপাশি ইংরেজি বা অন্য ভাষায় পরিচালিত স্যাটেলাইট বা অনলাইনভিত্তিক যেকোনো মাধ্যমও এই আইনের আওতায় পড়বে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সাংবাদিকের তথ্যসংগ্রহ ও সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকার বাধ্য থাকবে। কোনো নিবর্তনমূলক আইনে সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যাবে না। তদুপরি, সরকার বা প্রশাসনের কোনো সংস্থা সাংবাদিককে তথ্যসূত্র জানাতে বাধ্য করতে পারবে না, এমনকি তার ওপর মানসিক বা শারীরিক চাপও প্রয়োগ করা যাবে না।

সাংবাদিকের বাড়ি, পরিবার, ব্যক্তিগত জীবন, গোপনীয়তা সবকিছুই থাকবে সুরক্ষিত। আদালতের আদেশ ছাড়া কোনো তদন্ত বা জব্দ অভিযান চালানো যাবে না। এ ছাড়া সাংবাদিক যেন নিরাপদ, চাপমুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায়ভার রাখা হয়েছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওপর।

নারী সাংবাদিকদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধেও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক গণমাধ্যম কমিশনে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন, যা শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করা হবে।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তবে এখনই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে না, কারণ সংশোধনের সুযোগ এখনো রয়েছে।”

সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর জানান, “এটাই দেশের প্রথম আইন, যা সরাসরি সাংবাদিকতার অধিকার রক্ষায় প্রণীত হচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি, দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধেও থাকবে আইনগত ব্যবস্থা।”

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষায় সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ

Update Time : 02:56:59 pm, Friday, 9 May 2025

সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে প্রণীত এই খসড়া অধ্যাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে সাংবাদিকদের হয়রানি, হুমকি বা সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

খসড়া অনুযায়ী, কেউ যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকের ওপর সহিংসতা চালায়, হুমকি দেয় কিংবা হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানার অর্থ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে মিথ্যা অভিযোগের ক্ষেত্রেও রয়েছে শাস্তি। যদি কোনো সাংবাদিক প্রমাণসহ মিথ্যা অভিযোগ করেন, তবে তার জন্যও এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

অধ্যাদেশের আওতায় ‘সাংবাদিক’ বলতে সম্পাদক থেকে শুরু করে রিপোর্টার, কপি টেস্টার, কার্টুনিস্ট, সংবাদ চিত্রগ্রাহক, এমনকি খণ্ডকালীন বা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। বাংলাভাষার পাশাপাশি ইংরেজি বা অন্য ভাষায় পরিচালিত স্যাটেলাইট বা অনলাইনভিত্তিক যেকোনো মাধ্যমও এই আইনের আওতায় পড়বে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সাংবাদিকের তথ্যসংগ্রহ ও সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকার বাধ্য থাকবে। কোনো নিবর্তনমূলক আইনে সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যাবে না। তদুপরি, সরকার বা প্রশাসনের কোনো সংস্থা সাংবাদিককে তথ্যসূত্র জানাতে বাধ্য করতে পারবে না, এমনকি তার ওপর মানসিক বা শারীরিক চাপও প্রয়োগ করা যাবে না।

সাংবাদিকের বাড়ি, পরিবার, ব্যক্তিগত জীবন, গোপনীয়তা সবকিছুই থাকবে সুরক্ষিত। আদালতের আদেশ ছাড়া কোনো তদন্ত বা জব্দ অভিযান চালানো যাবে না। এ ছাড়া সাংবাদিক যেন নিরাপদ, চাপমুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায়ভার রাখা হয়েছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওপর।

নারী সাংবাদিকদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধেও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক গণমাধ্যম কমিশনে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন, যা শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করা হবে।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তবে এখনই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে না, কারণ সংশোধনের সুযোগ এখনো রয়েছে।”

সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর জানান, “এটাই দেশের প্রথম আইন, যা সরাসরি সাংবাদিকতার অধিকার রক্ষায় প্রণীত হচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি, দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধেও থাকবে আইনগত ব্যবস্থা।”