Dhaka 12:06 pm, Sunday, 18 May 2025

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বন্ধ করলো ভারত

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত।

ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তৈরি পোশাকসহ একাধিক পণ্যের রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চীন সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ‘ল্যান্ডলকড’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিল্লি এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

চীনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ‘সমুদ্রবন্দরবিহীন (ল্যান্ডলকড)’ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারত এই মন্তব্যকে অপমানজনক বলে মনে করছে। দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মহল মনে করছে, এতে তাদের আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অগ্রগতিকে হেয় করা হয়েছে।ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ি এবং চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আর বাংলাদেশি পণ্য ঢুকতে পারবে না। এসব বন্দর দিয়ে আগে বাংলাদেশ তার ৯৩ শতাংশ রপ্তানি পাঠাত।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন এসব পণ্য শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বন্দর কিংবা মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা বন্দর দিয়ে যেতে পারবে।ভারতের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ একতরফাভাবে ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার পেলেও ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে একই ধরনের সুবিধা দেয়নি। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই এই সিদ্ধান্ত। পারস্পরিকতার ভিত্তিতে চলতে হবে, নাহলে একতরফা ছাড় আর নয়।’

ভারত আরও অভিযোগ করেছে, ট্রানজিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১.৮ টাকা ফি নিচ্ছে, যেখানে দেশের অভ্যন্তরীণ হার টনপ্রতি ০.৮ টাকা। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি করেছে তারা।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, মেলামাইন, আসবাবপত্র, জুস, কোমল পানীয়, বেকারি ও প্রসেসড ফুডসহ একাধিক রপ্তানি পণ্য ভারতে পাঠাতে বাধার মুখে পড়বে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা আসবে তৈরি পোশাক খাতে, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়ে থাকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক এই ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একদিকে বড় আর্থিক ধাক্কা হলেও, ভারতের স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য এটি হতে পারে বাজার দখলের সুবর্ণ সুযোগ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বন্ধ করলো ভারত

Update Time : 11:51:52 pm, Saturday, 17 May 2025

ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তৈরি পোশাকসহ একাধিক পণ্যের রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চীন সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ‘ল্যান্ডলকড’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিল্লি এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

চীনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ‘সমুদ্রবন্দরবিহীন (ল্যান্ডলকড)’ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারত এই মন্তব্যকে অপমানজনক বলে মনে করছে। দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মহল মনে করছে, এতে তাদের আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অগ্রগতিকে হেয় করা হয়েছে।ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাড়ি এবং চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আর বাংলাদেশি পণ্য ঢুকতে পারবে না। এসব বন্দর দিয়ে আগে বাংলাদেশ তার ৯৩ শতাংশ রপ্তানি পাঠাত।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন এসব পণ্য শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বন্দর কিংবা মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা বন্দর দিয়ে যেতে পারবে।ভারতের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ একতরফাভাবে ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার পেলেও ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে একই ধরনের সুবিধা দেয়নি। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই এই সিদ্ধান্ত। পারস্পরিকতার ভিত্তিতে চলতে হবে, নাহলে একতরফা ছাড় আর নয়।’

ভারত আরও অভিযোগ করেছে, ট্রানজিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১.৮ টাকা ফি নিচ্ছে, যেখানে দেশের অভ্যন্তরীণ হার টনপ্রতি ০.৮ টাকা। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি করেছে তারা।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, মেলামাইন, আসবাবপত্র, জুস, কোমল পানীয়, বেকারি ও প্রসেসড ফুডসহ একাধিক রপ্তানি পণ্য ভারতে পাঠাতে বাধার মুখে পড়বে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা আসবে তৈরি পোশাক খাতে, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়ে থাকে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক এই ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি একদিকে বড় আর্থিক ধাক্কা হলেও, ভারতের স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য এটি হতে পারে বাজার দখলের সুবর্ণ সুযোগ।