Dhaka 3:23 pm, Monday, 28 April 2025

দৃষ্টিহীনদের চলাফেরায় চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি

চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি

দৃষ্টিহীন ও স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য চলাফেরা সহজ করতে নতুন এক পরিধানযোগ্য এআই-চালিত ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। ডিভাইসটি আশপাশের বাধা শনাক্ত করে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ পথের দিকনির্দেশনা দেয়, যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের চলাফেরায় এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

এই গবেষণা ‘নেচার মেশিন ইন্টেলিজেন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। চীনের শাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লেইলেই গু ও তাঁর দল এই উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দেন।

কীভাবে কাজ করে ডিভাইসটি?

ডিভাইসটি ছোট, হালকা এবং ব্যবহারকারী ভ্রুর মাঝখানে পরিধানযোগ্য। এতে থাকা ক্যামেরা আশপাশের দৃশ্য ক্যাপচার করে, যা এআই অ্যালগরিদমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ করে সামনে থাকা প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে।

দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য ডিভাইসটি দুইটি উপায় ব্যবহার করে:

  1. বোন কন্ডাকশন হেডফোন: শব্দ তরঙ্গ সরাসরি কানের ভেতরে পৌঁছায়, ফলে বাইরের শব্দ শোনা যায় এবং দিকনির্দেশনাও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

  2. কৃত্রিম ত্বক বা স্কিন: কবজিতে পরিধানযোগ্য এই ডিভাইসটি মৃদু কম্পনের মাধ্যমে সংকেত দেয়, যদি সামনে কোনো বাধা থাকে।

কার্যকারিতা ও বাস্তব পরীক্ষা

ডিভাইসটির কার্যকারিতা যাচাইয়ে গবেষকরা প্রথমে রোবটিক সিমুলেশন এবং পরে ২০ জন দৃষ্টিহীন ও স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর বাস্তব পরীক্ষা চালান। মাত্র ২০ মিনিট প্রশিক্ষণের মধ্যেই বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ডিভাইসটি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে সক্ষম হন। তারা শুধু চলাফেরাই নয়, বরং বস্তু শনাক্ত ও তুলেও নিতে পারেন।

বর্তমানে এই প্রযুক্তি ২১টি বস্তু, যেমন বিছানা, চেয়ার, টেবিল, বেসিন, টিভি ও খাবার শনাক্ত করতে পারে। গবেষকরা জানান, দৃষ্টি, শ্রবণ ও স্পর্শ এই তিনটি ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে প্রযুক্তির কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং এটি ব্যবহারকারীদের কাছে আরও স্বাভাবিক অনুভূতি তৈরি করে।

প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা

চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার সব সময় সহজলভ্য নয়, আর বাজারে থাকা অনেক ডিভাইস জটিল ব্যবহারের কারণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মাঝে জনপ্রিয়তা পায়নি। এই পটভূমিতে চীনা বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনটি হতে পারে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা।

গবেষকরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি শুধু চলাফেরার ক্ষেত্রেই নয়, দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস এবং জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ
বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

দৃষ্টিহীনদের চলাফেরায় চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি

Update Time : 06:32:29 pm, Monday, 21 April 2025

দৃষ্টিহীন ও স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য চলাফেরা সহজ করতে নতুন এক পরিধানযোগ্য এআই-চালিত ডিভাইস উদ্ভাবন করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। ডিভাইসটি আশপাশের বাধা শনাক্ত করে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ পথের দিকনির্দেশনা দেয়, যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের চলাফেরায় এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

এই গবেষণা ‘নেচার মেশিন ইন্টেলিজেন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। চীনের শাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লেইলেই গু ও তাঁর দল এই উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দেন।

কীভাবে কাজ করে ডিভাইসটি?

ডিভাইসটি ছোট, হালকা এবং ব্যবহারকারী ভ্রুর মাঝখানে পরিধানযোগ্য। এতে থাকা ক্যামেরা আশপাশের দৃশ্য ক্যাপচার করে, যা এআই অ্যালগরিদমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ করে সামনে থাকা প্রতিবন্ধকতা শনাক্ত করে।

দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য ডিভাইসটি দুইটি উপায় ব্যবহার করে:

  1. বোন কন্ডাকশন হেডফোন: শব্দ তরঙ্গ সরাসরি কানের ভেতরে পৌঁছায়, ফলে বাইরের শব্দ শোনা যায় এবং দিকনির্দেশনাও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

  2. কৃত্রিম ত্বক বা স্কিন: কবজিতে পরিধানযোগ্য এই ডিভাইসটি মৃদু কম্পনের মাধ্যমে সংকেত দেয়, যদি সামনে কোনো বাধা থাকে।

কার্যকারিতা ও বাস্তব পরীক্ষা

ডিভাইসটির কার্যকারিতা যাচাইয়ে গবেষকরা প্রথমে রোবটিক সিমুলেশন এবং পরে ২০ জন দৃষ্টিহীন ও স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর বাস্তব পরীক্ষা চালান। মাত্র ২০ মিনিট প্রশিক্ষণের মধ্যেই বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ডিভাইসটি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে সক্ষম হন। তারা শুধু চলাফেরাই নয়, বরং বস্তু শনাক্ত ও তুলেও নিতে পারেন।

বর্তমানে এই প্রযুক্তি ২১টি বস্তু, যেমন বিছানা, চেয়ার, টেবিল, বেসিন, টিভি ও খাবার শনাক্ত করতে পারে। গবেষকরা জানান, দৃষ্টি, শ্রবণ ও স্পর্শ এই তিনটি ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে প্রযুক্তির কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং এটি ব্যবহারকারীদের কাছে আরও স্বাভাবিক অনুভূতি তৈরি করে।

প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা

চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার সব সময় সহজলভ্য নয়, আর বাজারে থাকা অনেক ডিভাইস জটিল ব্যবহারের কারণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মাঝে জনপ্রিয়তা পায়নি। এই পটভূমিতে চীনা বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনটি হতে পারে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা।

গবেষকরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি শুধু চলাফেরার ক্ষেত্রেই নয়, দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস এবং জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।