
মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপন—সায়েন্স ফিকশন থেকে বাস্তবতার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এই স্বপ্ন। বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের মাধ্যমে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর উচ্চাশা প্রকাশ করেছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গল গ্রহের চরম প্রতিকূল পরিবেশে মানুষের টিকে থাকা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ পৃথিবীর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ পাতলা এবং এর ৯৫ শতাংশই কার্বন ডাই–অক্সাইডে গঠিত। সেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ এতটাই কম যে, মানুষ শ্বাস নিতে পারবে না। ফলে মঙ্গলে বাস করতে হলে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহের প্রযুক্তি আবশ্যক।
তবে শুধু অক্সিজেনের অভাবই নয়, মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল মহাজাগতিক ও সৌর বিকিরণ প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়। এর ফলে ক্যানসার, স্নায়বিক ক্ষতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া তাপমাত্রাও এক বড় সমস্যা। মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৫ থেকে মাইনাস ১২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। এই প্রচণ্ড ঠান্ডায় টিকে থাকতে হলে উন্নত তাপনিরোধী আবাসস্থল ও পোশাক অপরিহার্য।
এ ছাড়াও, মঙ্গলের বিখ্যাত ধূলিঝড়ও বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। এই ধূলিঝড় একটানা কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে চলতে পারে, যা সৌর প্যানেল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তরল পানির উপস্থিতি নিয়ে এখনো নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। যদিও কিছু অঞ্চলে বরফের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, তবে তা পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য নয়। বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং খাদ্য উৎপাদনের প্রতিকূলতা মানব বসতির প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি, মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর এক–তৃতীয়াংশ হওয়ায় দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করলে মানুষের হাড় ও পেশির গঠন দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি গড়ার স্বপ্ন থেমে নেই। দিন দিন উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি, বাড়ছে গবেষণা। ভবিষ্যতে এই লাল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনের স্বপ্ন হয়তো একদিন বাস্তবেই রূপ নেবে—কিন্তু তা যে সহজ হবে না, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরাই।