Dhaka 3:36 pm, Friday, 14 March 2025

হারুনের সেই ভাতের হোটেল

‘ভাতের হোটেলের’ হারুন পলাতক

ডিবি কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাত খাওয়ানোর ভিডিও করে প্রচার করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবি কার্যালয়ে তাঁর এমন কর্মকাণ্ডকে অনেকে ‘দুষ্টুমি’ করে বলতেন ‘হারুনের ভাতের হোটেল’। এমন নামকরণের বিষয়টি অবশ্য উপভোগ করতেন তিনি। একাধিক সাক্ষাৎকারে হারুন নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ভাতের হোটেলের’ হারুন পলাতক। এখন ডিবিপ্রধানের দায়িত্বে আছেন রেজাউল করিম মল্লিক। তিনিসহ ডিবির কর্মকর্তারা ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নিয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন।

ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ডিবি কার্যালয়ে ‘ভাতের হোটেল’ আর ফিরবে না। হারুন এবং তাঁর ভাতের হোটেলের কারণে ডিবির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল। মানুষ এটি নিয়ে হাসি-তামাশা করেছে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে হারুন হাস্যরসে পরিণত করেছিলেন। হারুন যে কক্ষটিকে ভাতের হোটেল বানিয়েছিলেন, সেই কক্ষ এখন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হারুনের ভাতের হোটেল নামের রহস্য:

হারুন অর রশীদ ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০২২ সালের জুলাই মাসে। পরের বছর ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পুরান ঢাকা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ের একটি কক্ষে তখন আপ্যায়ন করেন হারুন। নিজে গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দেন এবং সেটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয় তখন। মূলত এরপরই ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নাম চালু হয়।

ডিবির ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পেশাদার কাজের মধ্য দিয়ে ফিরতে শুরু করেছে। এখনকার ডিবি হারুনের ডিবি নয়, সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার ডিবি হয়ে উঠেছে। ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক।

এরকম বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই কক্ষে আপ্যায়ন করে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন হারুন অর রশীদ। অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস এবং কৌশিক হোসেন তাপস, বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসা তারকা, টিকটকার ও ব্লগার এভাবেই আপ্যায়ন করেছিল। এভাবে ডিবি কার্যালয় ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামে আরও পরিচিত পায়।

‘জাতিকে নিয়ে মশকরা’

গত বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনা হয়। আইন অনুযায়ী তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়। তখন তাঁদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার ছবিও ফেসবুকে প্রচার করেছেন হারুন।

রিটের শুনানিতে তৎকালীন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘টিভিতে দেখেছি, এই ছয়জন (সমন্বয়ক) কাঁটাচামচ দিয়ে খাচ্ছে।’ একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।’

‘ভাতের হোটেল’ কক্ষটি এখন:

গত সপ্তাহে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ হিসেবে ব্যবহার করা সেই কক্ষটি পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। ওই কক্ষটির অবস্থান ডিবির পুরোনো ভবনের দোতলায়। সেই কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বড় টেবিলের চারপাশে চেয়ার রাখা। ওই কক্ষের পাশের কক্ষেই বসেন ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক।ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, কখনো এই কক্ষে এখন ছোট সভা করা হয়। আবার কখনো এই কক্ষে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ডিবির ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পেশাদার কাজের মধ্য দিয়ে ফিরতে শুরু করেছে। এখনকার ডিবি হারুনের ডিবি নয়, সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার ডিবি হয়ে উঠেছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

হারুনের সেই ভাতের হোটেল

Update Time : 11:37:08 am, Tuesday, 11 March 2025
ডিবি কার্যালয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাত খাওয়ানোর ভিডিও করে প্রচার করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবি কার্যালয়ে তাঁর এমন কর্মকাণ্ডকে অনেকে ‘দুষ্টুমি’ করে বলতেন ‘হারুনের ভাতের হোটেল’। এমন নামকরণের বিষয়টি অবশ্য উপভোগ করতেন তিনি। একাধিক সাক্ষাৎকারে হারুন নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘ভাতের হোটেলের’ হারুন পলাতক। এখন ডিবিপ্রধানের দায়িত্বে আছেন রেজাউল করিম মল্লিক। তিনিসহ ডিবির কর্মকর্তারা ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নিয়ে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন।

ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ডিবি কার্যালয়ে ‘ভাতের হোটেল’ আর ফিরবে না। হারুন এবং তাঁর ভাতের হোটেলের কারণে ডিবির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল। মানুষ এটি নিয়ে হাসি-তামাশা করেছে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ডিবির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে হারুন হাস্যরসে পরিণত করেছিলেন। হারুন যে কক্ষটিকে ভাতের হোটেল বানিয়েছিলেন, সেই কক্ষ এখন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হারুনের ভাতের হোটেল নামের রহস্য:

হারুন অর রশীদ ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০২২ সালের জুলাই মাসে। পরের বছর ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পুরান ঢাকা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ের একটি কক্ষে তখন আপ্যায়ন করেন হারুন। নিজে গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দেন এবং সেটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয় তখন। মূলত এরপরই ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নাম চালু হয়।

ডিবির ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পেশাদার কাজের মধ্য দিয়ে ফিরতে শুরু করেছে। এখনকার ডিবি হারুনের ডিবি নয়, সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার ডিবি হয়ে উঠেছে। ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক।

এরকম বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওই কক্ষে আপ্যায়ন করে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেন হারুন অর রশীদ। অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস এবং কৌশিক হোসেন তাপস, বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসা তারকা, টিকটকার ও ব্লগার এভাবেই আপ্যায়ন করেছিল। এভাবে ডিবি কার্যালয় ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামে আরও পরিচিত পায়।

‘জাতিকে নিয়ে মশকরা’

গত বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনা হয়। আইন অনুযায়ী তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়। তখন তাঁদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার ছবিও ফেসবুকে প্রচার করেছেন হারুন।

রিটের শুনানিতে তৎকালীন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘টিভিতে দেখেছি, এই ছয়জন (সমন্বয়ক) কাঁটাচামচ দিয়ে খাচ্ছে।’ একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।’

‘ভাতের হোটেল’ কক্ষটি এখন:

গত সপ্তাহে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ হিসেবে ব্যবহার করা সেই কক্ষটি পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক। ওই কক্ষটির অবস্থান ডিবির পুরোনো ভবনের দোতলায়। সেই কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, বড় টেবিলের চারপাশে চেয়ার রাখা। ওই কক্ষের পাশের কক্ষেই বসেন ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক।ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, কখনো এই কক্ষে এখন ছোট সভা করা হয়। আবার কখনো এই কক্ষে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ডিবির বর্তমান প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ডিবির ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পেশাদার কাজের মধ্য দিয়ে ফিরতে শুরু করেছে। এখনকার ডিবি হারুনের ডিবি নয়, সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার ডিবি হয়ে উঠেছে।