Dhaka 4:24 pm, Wednesday, 19 March 2025

বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে বিমানবন্দর থানা 

মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক পেশাদার প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির বিমানবন্দর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতের নাম সওকত হোসাইন সুমন ওরফে আশরাফুল চৌধুরী ইমরান (৩৯)।
গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) রাত ১০:৩০ টায় রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিমানবন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, জনৈক ডাঃ এএসএম বদরুদ্দোজার সাথে ব্যবসায়িক সর্ম্পকের সূত্র ধরে গ্রেফতারকৃত প্রতারক আশরাফুল চৌধুরী ইমরান ও তার সহযোগীদের পরিচয় হয়। ইমরান জানায় সে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরি করে এবং বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ নিয়ে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করতে পারবে। এ বিষয়ে ইমরান ও তার সহযোগীদের সাথে বদরুদ্দোজার কয়েক দফা মিটিং হয়। গত ১৩ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাদের সাথে বদরুদ্দোজার আরো একটি মিটিং হয় এবং তারা ভিকটিম বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ নেওয়ার জন্য ৭ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানায়। তাদের কথা বিশ্বাস করে বদরুদ্দোজা গত ১৮ নভেম্বর উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে ইমরান ও তার সহযোগীদের ৭ হাজার ডলার প্রদান করেন। দুইদিন পর গত ২০ নভেম্বর ইমরান ও তার সহযোগীরা বদরুদ্দোজাকে জানায় তিনি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ পেয়েছেন এবং এখন  তাকে দুই লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের ফলে তিনি লভ্যাংশ বাবদ সপ্তাহে পাঁচ হাজার  ডলার পাবেন। ভিকটিম বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি দেখে তার পূর্বে প্রদত্ত ৭ হাজার ডলার ফেরত চেয়ে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রতারকরা তাকে নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করায়। এরপর ভিকটিম গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে প্রতারক চক্রকে তাদের কথামতো দুই লাখ ডলার প্রদান করেন।  এরপর তারা ভিকটিমকে জানায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ ও বিনিয়োগের যাবতীয় কাগজপত্র ও প্রদানকৃত ইউএস ডলার গ্রহণের রশিদ সিঙ্গাপুর হতে তাদের কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষর করে ওইদিন (১৮ ডিসেম্বর) রাতেই পাঠাবে। এরপর তারা ভিকটিমকে কাগজপত্রগুলো পাঠিয়ে দিবে। রাতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ভিকটিম তাদেরকে কয়েকবার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। তখন ভিকটিম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।  তিনি তাদের খপ্পরে পড়ে দুই ধাপে ২ লাখ ৭ হাজার ইউএস ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন। এ ঘটনায় ভিকটিম ডাঃ এএসএম বদরুদ্দোজার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে বিমানবন্দর থানায় একটি প্রতারণার মামলা রুজু করা হয়।
থানা সূত্রে আরো জানা যায়, মামলা রুজুর পর বিমানবন্দর থানা পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতারক চক্রটিকে গ্রেফতারে তৎপরতা চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের একজন ইমরানের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত সোমবার (৬ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) রাত ১০:৩০ টায় বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানা যায়, আশরাফুল চৌধুরী ইমরান ও তার সহযোগীরা পেশাদার প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ দেওয়া ও বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে গুলশান থানারও একটি প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে।
বিমানবন্দর থানার মামলায় গ্রেফতারকৃতকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতারণার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে বিমানবন্দর থানা 

Update Time : 04:55:13 pm, Wednesday, 8 January 2025
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক পেশাদার প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির বিমানবন্দর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতের নাম সওকত হোসাইন সুমন ওরফে আশরাফুল চৌধুরী ইমরান (৩৯)।
গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) রাত ১০:৩০ টায় রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিমানবন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, জনৈক ডাঃ এএসএম বদরুদ্দোজার সাথে ব্যবসায়িক সর্ম্পকের সূত্র ধরে গ্রেফতারকৃত প্রতারক আশরাফুল চৌধুরী ইমরান ও তার সহযোগীদের পরিচয় হয়। ইমরান জানায় সে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরি করে এবং বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ নিয়ে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করতে পারবে। এ বিষয়ে ইমরান ও তার সহযোগীদের সাথে বদরুদ্দোজার কয়েক দফা মিটিং হয়। গত ১৩ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাদের সাথে বদরুদ্দোজার আরো একটি মিটিং হয় এবং তারা ভিকটিম বদরুদ্দোজাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ নেওয়ার জন্য ৭ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানায়। তাদের কথা বিশ্বাস করে বদরুদ্দোজা গত ১৮ নভেম্বর উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে ইমরান ও তার সহযোগীদের ৭ হাজার ডলার প্রদান করেন। দুইদিন পর গত ২০ নভেম্বর ইমরান ও তার সহযোগীরা বদরুদ্দোজাকে জানায় তিনি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ পেয়েছেন এবং এখন  তাকে দুই লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের ফলে তিনি লভ্যাংশ বাবদ সপ্তাহে পাঁচ হাজার  ডলার পাবেন। ভিকটিম বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি দেখে তার পূর্বে প্রদত্ত ৭ হাজার ডলার ফেরত চেয়ে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রতারকরা তাকে নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করায়। এরপর ভিকটিম গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. উত্তরার হোটেল রিসমন্ডে প্রতারক চক্রকে তাদের কথামতো দুই লাখ ডলার প্রদান করেন।  এরপর তারা ভিকটিমকে জানায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ ও বিনিয়োগের যাবতীয় কাগজপত্র ও প্রদানকৃত ইউএস ডলার গ্রহণের রশিদ সিঙ্গাপুর হতে তাদের কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ স্বাক্ষর করে ওইদিন (১৮ ডিসেম্বর) রাতেই পাঠাবে। এরপর তারা ভিকটিমকে কাগজপত্রগুলো পাঠিয়ে দিবে। রাতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ভিকটিম তাদেরকে কয়েকবার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। তখন ভিকটিম বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।  তিনি তাদের খপ্পরে পড়ে দুই ধাপে ২ লাখ ৭ হাজার ইউএস ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন। এ ঘটনায় ভিকটিম ডাঃ এএসএম বদরুদ্দোজার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে বিমানবন্দর থানায় একটি প্রতারণার মামলা রুজু করা হয়।
থানা সূত্রে আরো জানা যায়, মামলা রুজুর পর বিমানবন্দর থানা পুলিশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতারক চক্রটিকে গ্রেফতারে তৎপরতা চালায়। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের একজন ইমরানের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত সোমবার (৬ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) রাত ১০:৩০ টায় বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানা যায়, আশরাফুল চৌধুরী ইমরান ও তার সহযোগীরা পেশাদার প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর সদস্য পদ দেওয়া ও বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসছে মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে গুলশান থানারও একটি প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে।
বিমানবন্দর থানার মামলায় গ্রেফতারকৃতকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতারণার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।