
একটি দেশের টেকসই বা অবকাঠামোগত, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যে কোনো উন্নয়নই যদি বলি! এসব উন্নয়নের ভিত্তি কি? এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে আমি তুলনামূলক কতগুলো বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছি।এই বিবেচনায় ভৌগোলিক, আঞ্চলিক,শক্তি সম্পদ, দক্ষ মানবসম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদসহ বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে।দেশের উন্নয়ন একাধিক এবং অভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।তবে সকল দেশের এবং সকল কিছুর ঊর্ধ্বে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো মানবসম্পদ।আর এই মানবসম্পদ তৈরির মূলে রয়েছে “শিক্ষা”।শিক্ষার এই জায়গাটা কোনো সভ্যতা,কোনো জাতি, কোনো দেশ আজ পর্যন্ত এড়িয়ে গিয়ে কোনো কিছু করতে পারে নাই,আর অদূর ভবিষ্যৎতে তা পারবে বলে মনে হয় না।সভ্যতার ক্রমবিকাশে ও তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ আর বিশ্বায়নের প্রসারে ;শিক্ষা একটা সার্বজনীন বিষয় যাকে কেন্দ্র করে একটি দেশের সামগ্রিক এবং টেকসই উন্নয়নের ভীত রচিত হয়।শিক্ষা ব্যবস্থা একটি জাতির আশা আকাক্সক্ষা রূপায়নের ও ভবিষ্যৎ সমাজ নিধারণের হাতিয়ার।সুনাগরিক সৃষ্টিতে এবং প্রগতিশীল সমাজ গঠনে শিক্ষার ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এটা এমন একটি শক্তিশালী পিলার যা রাষ্ট্র নামক বৃহৎ অট্রালিকাকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করে। শিক্ষার বিস্তার ও তার শিকড় এতটাই গভীর যেকোনো জাতিকে সমৃদ্ধ জাতিতে রুপান্তরে সক্ষম। তাহলে কোন শিক্ষাকে আমরা টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে ধরে নিব?সার্বজনীন শিক্ষা,বহুমুখী শিক্ষা, অন্তভুর্ক্তিমূলক শিক্ষা নাকি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা।বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ গুলো তাহলে কোন শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে? বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো মূলত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেই (ঞবপযহরপধষ ্ ঠড়পধঃরড়হধষ ঊফঁপধঃরড়হ) গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং এর ফলাফল আমরা চীন,সিঙ্গাপুর, জাপান, কোরিয়া এবং তাইওয়ান এর দিকে তাকালেই বুঝতে পারি।এসব দেশ কেন এতো দ্রæত আগাচ্ছে? অনেকগুলো কারনের মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার।যেখানে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছে তাহলে আমরা কি করছি?এই প্রশ্নের উত্তর খোজার আগে দেখে আসি শিক্ষা নিয়ে বিশ্ব কি চিন্তা করে–
জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষনা (১০ডিসেম্বর, ১৯৪৮) এর অনুচ্ছেদ – ২৬ অনুসারে “ঊাবৎুড়হব যধং ঃযব ৎরমযঃ ঃড় বফঁপধঃরড়হ. ঊফঁপধঃরড়হ ংযধষষ নব ভৎবব, ধঃ ষবধংঃ রহ ঃযব বষবসবহঃধৎু ধহফ ভঁহফধসবহঃধষ ংঃধমবং. ঊষবসবহঃধৎু বফঁপধঃরড়হ ংযধষষ নব পড়সঢ়ঁষংড়ৎু. ঞবপযহরপধষ ধহফ ঢ়ৎড়ভবংংরড়হধষ বফঁপধঃরড়হ ংযধষষ নব সধফব মবহবৎধষষু ধাধরষধনষব ধহফ যরমযবৎ বফঁপধঃরড়হ ংযধষষ নব বয়ঁধষষু ধপপবংংরনষব ঃড় ধষষ ড়হ ঃযব নধংরং ড়ভ সবৎরঃ.”এখানে প্রাথমিক শিক্ষা এবং কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষাকে আগে গুরুত্ব দিয়ে তারপর উচ্চশিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
ইউনেস্কো পরামর্শ অনুযায়ী, যেকোনো দেশ তার মোট জিডিপির ৪-৬% এবং মোট বাজেটের ২০শতাংশ ব্যায় করবে শিক্ষাখাতে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাই করে আসছে।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষায় ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু বাজেটে শিক্ষাখাতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিলেন।বঙ্গবন্ধু ছাড়া দেশের কোন সরকার শিক্ষায় বাজেটের ২০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ রাখে নি।যদিও বর্তমান সরকার বাজেটে শিক্ষাকে বেশি অগ্রাধিকার দেন কিন্তু আন্তজার্তিক মানদÐের তুলনায় তা অপ্রতুল।বর্তমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ ইউনেস্কোর, যা প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি।সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বাজেট-পরবর্তী এক আলোচনায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জিডিপির শতাংশ হিসেবে বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে গড় ব্যয় ছিল ৪১টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে পঞ্চম সর্বনিম্ন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক এবং নিরাপদ রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ।শিক্ষার অর্থনীতি নিয়ে মৌলিক গবেষণায় অর্থনীতিবদ আর্থার শুল্জ ও রবার্ট সলো দেখিয়েছেন যে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে সম্পদের সুফল ফেরত আসে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক শিক্ষায় ২০ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষায় ১১ শতাংশ। এবার আসি আমাদের শিক্ষানীতি নিয়ে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’’। এই শিক্ষা নীতি প্রণয়নের নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধরী এবং ড. খলীকুজ্জামান আহমদ। সর্বমোট ২৮ টি অধ্যায় ও দুটি সংযোজনী নিয়ে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ প্রণীত হয়। শিক্ষা নীতির অধ্যায়েসমূহে শিক্ষার বিভিন্ন স্তর, ধারা,ক্ষেত্র, পাঠক্রম, নারী শিক্ষা, শিক্ষার্থী কল্যান, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকার ইত্যাদি স্তর নির্বিশেষে গৃহিতব্য পদক্ষেপ।
জাতীয় শিক্ষানীতির প্রথম অধ্যায়টি শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত করে যা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর মূল ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন ও অর্জনের রক্ষ্যে পরবর্তীতে আরো ২৭ টি অধ্যায়ে শিক্ষার বিভিন্ন নীতি, পদ্ধতি, দর্শন, সুপারিশ ও করণীয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়। জাতীয় শিক্ষানীতি হলো একটি দেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রশাসনের জন্য নির্দেশিকা এবং কাঠামো যা শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং অগ্রাধিকারের রূপরেখা দিয়ে থাকে এবং শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নতির জন্য একটি রোডম্যাপ প্রদান করে। জাতীয় শিক্ষানীতি শিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে, যেমন গ্রহণযোগ্যতা, গুণমান, পাঠ্যক্রম, অর্থায়ন এবং অংশীদারিত্ব। এ নীতির লক্ষ্য হলো প্রত্যেকের মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং এ শিক্ষাব্যবস্থা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং প্রতিক্রিয়াশীল যা সমাজের পরিবর্তিত চাহিদাকে পূরণ করবে।বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কৌশলের রূপরেখা দেয়। লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বা ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে সব নাগরিককে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা এবং সবার জন্য শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।তাছড়া শিক্ষায় সার্বজনীনতা এবং অন্তভুর্ক্তিমূলক শিক্ষার কথা থাকলেও শিক্ষার গুনগত মানের উন্নয়ন নিয়ে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ কিংবা কারিগরি শিক্ষার দিকটি বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হয় নি।বাংলাদেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, প্রাথমিকে ভর্তির মতো সংখ্যাগত দিক থেকে সাফল্য অর্জিত হলেও শিক্ষার মানের ঘাটতি উঠে আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায়।আমাদের ফোকাসের জায়গা হলো —শিক্ষায় প্রবেশ অগ্রাধিকার ও অন্তভুর্ক্তিমূলক শিক্ষা,শিক্ষায় সার্বজনীনতা,শিক্ষার বহুমুখীতা ইত্যাদি।প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকে আমাদের শিক্ষানীতির সফলতা দৃশ্যমান। বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি যা শিক্ষার বহুমুখীকরণে সাহায্য করছে।কিন্তু গুনগত এবং মানসম্মত শিক্ষা দিতে আমরা এখনো নিজেদেরকে তৈরি করতে পারি নি।
ফিনল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে ইত্যাদি দেশগুলোতে স্কুলশিক্ষকতা হচ্ছে ওই দেশগুলোর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরিগুলোর মধ্যে একটি। এ ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ডের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ফিনল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে আপনাকে আপনার ক্লাসে প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকতে হবে। এর বাইরে হলে আপনি অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর ওপর প্রার্থীর মূল্যায়ন করা হয়। যেমন তিনি কত আকর্ষণীয়ভাবে ক্লাস নিচ্ছেন, গ্রæপওয়ার্কগুলো কেমন হচ্ছে, তার ক্লাসে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিচ্ছে কি না বা ঠিকমতো শিখছে কি না ইত্যাদি। এক বছরের শিক্ষক প্রশিক্ষণে ভাইভা, লিখিত পরীক্ষা আর সবশেষে র্প্যাকটিক্যাল পরীক্ষা থাকে। এক বছরের প্রশিক্ষণের পর সব প্রার্থীর মধ্য থেকে বাছাই করে সেরা ১০ প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। ভেবে দেখুন, ইউনিভার্সিটিতে নিজ নিজ বিভাগের সেরা ১০ ছাত্রছাত্রীর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃতদের মধ্য থেকে ছেঁকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শেষে সেরা ১০ জনকেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। তাহলে গাণিতিক হিসাবে ফিনল্যান্ডের সেরা ১ শতাংশ র্গ্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী আসলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন। নিউজিল্যান্ডে তিন ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে সরকারি স্কুলগুলোতে পড়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর সরকারি নিবন্ধনভুক্ত (বেসরকারিভাবে পরিচালিত) স্কুলে পড়ে ১২ শতাংশ। বাকি মাত্র ৩ শতাংশ যায় বেসরকারি স্কুলে।
বিশ্বে শিক্ষার মান যাচাইয়ের অন্যতম পদ্ধতি পিআইএসএ (প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট)-এর র্যাংকিং অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা টানা ৯ বছর ধরে বিশ্বের সেরা অবস্থানে ছিল। গণিত, বিজ্ঞান ও পঠন অভ্যাসের ওপর এই মূল্যায়ন পদ্ধতিটি হয়ে থাকে। পাশাপাশি গান, ছবি আঁকা ও হাতের কাজ শিশুদের শেখানো হয়। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, সেখানে শিশুদের কোনো পাঠ্যবই নেই। সেখানকার শিশুরা ৭ বছরের আগে স্কুলে যায় না। স্কুলও সকাল ৯টার আগে শুরু হয় না। স্কুলে দিনে সাধারণত ৩টি থেকে ৪টি ক্লাস হয়। প্রতিটি ক্লাস ৭৫ মিনিটের। প্রতি ক্লাসের পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিরতি দেওয়া হয়। এই বিরতি শিশুরা যাতে আগের ক্লাসে যা শিখেছে তা যেন চর্চা করতে পারে, হাঁটা-চলা ও পর¯পরের মধ্যে ভাববিনিময় করে নতুন উদ্যমে পরের ক্লাসটি শুরু করতে পারে সেজন্য। প্রতি ক্লাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী থাকে। হোমওয়ার্কের পেছনেও অন্যান্য দেশের তুলনায় ফিনল্যান্ডের শিশুদের কম সময় ব্যয় করতে হয়। এসবের বালাই নেই আমাদের দেশে!
সেরা শিক্ষাব্যবস্থার আরেকটি দেশ হলো সিঙ্গাপুর। বর্তমানে দুনিয়ার সেরা। এশিয়ার এই দেশটির বিজ্ঞান শিক্ষাকে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও অনুসরণ করছে। সিঙ্গাপুর জাতীয় বাজেটের ২০ ভাগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখে। সেখানে বিজ্ঞানের শ্রেণিকক্ষগুলো গতানুগতিক শ্রেণিকক্ষের মতো নয়। বরং তা দেখে মনে হবে বিজ্ঞানীদের গবেষণাগার। যেখানে বসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি, কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি, সফটওয়্যার বানানো থেকে শুরু করে রোবোটিকস ও অটোমেশনের বিভিন্ন কাজ তারা হাতে-কলমে করে থাকে। একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনসম্পৃক্ত শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠনে ভ‚মিকা রাখছে।
সেই তুলনায় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক আমাদের কাছে প্রশ্নাতীত থেকে যায়।সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্তে¡ও আমরা কেন শিক্ষাকে সার্বজনীন ও বহুমুখী করে আজ পর্যন্ত গুনগত একটা মানে রুপ দিতে পারেনি সেটা আমাদের ভেবে দেখা সময় এসেছে।তাদের সাথে আমাদের তুলনা অর্থহীন তবে আমরা তো তাদের কাছাকাছি যাওয়া দূরের কথা আগাতেও পারছি নাহ।যদিও সরকার বর্তমানে এসব নিয়ে কাজ করছে। বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষক প্রশিক্ষণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।সৃজনশীল শিক্ষাক্রম থেকে সরে এসে আমার মূল্যায়ন ভিত্তিক(অপঃরারঃু ইধংবফ) ক্রম নিয়ে কাজ করছে যা উন্নত বিশ্বে পড়ানো হয়।
বর্তমান সময়ের এই পর্যায়ে এসে অর্থ্যাৎ আমরা এলডিসি থেকে উত্তরনের পথে,মাথাপিছু আয়,বহি:বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উত্তরণ সহ বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনেতিক নির্ঘণ্টে আমাদের যে অগ্রগতির জোয়ার সেটাকে টেকসই করতে দক্ষ মানবসম্পদ এর কোনো বিকল্প নেই।আর সেই মানবসম্পদ তৈরির মূল হাতিয়ার হলো মানসম্মত ও গুনগত শিক্ষা।আমাদের সময় এসেছে ঐদিকে নজর দেওয়ার।তা না হলে আমরা আমাদের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি বেশিদিন ধরে রাখতে পারব নাহ।মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কয়েকটি উপাদানের যথাযথ সমন্বয় সাধন করতে হয়, যা বাস্তবায়ন করতে শিক্ষায় পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রয়োজন। আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, উপযুক্ত শিক্ষাদান সামগ্রী ও ভৌত অবকাঠামো প্রস্তুত, যথার্থ শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি আবিষ্কার, উপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি বিশ্লেষণ, ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং ইত্যাদি উপাদানগুলোর যথোপযুক্ত সমন্বয় সাধন করতে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া উচিত। এই জন্য সরকারের শিক্ষার সাথে জড়িত সেল গুলো আরো ইতিবাচক সমন্বয়ের ভ‚মিকা পালন করতে হবে।
লেখক: শরীফুল ইসলাম
সহকারী পরিচালক
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণায়।
লোক প্রশাসন বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।