Dhaka 1:09 am, Saturday, 15 March 2025

কৃষকের গরু চুরি করে মহিলা দলের সমাবেশে ভুড়িভোজ, আটক ২

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় এক কৃষকের গরু চুরি করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নারী সমাবেশের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভুড়িভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনায় গরুর চামড়া ও মাংসসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে, শনিবার বিকালে দলের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণের অভিযোগে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন উপজেলা বিএনপি।

মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি।

এর আগে শনিবার সকালে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে এ নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভুড়িভোজের আয়োজন করেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানী রান্নার জন্য শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠেছে।

চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে গোয়াল ঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজ খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোঁজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে শনিবার ভোরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

আটক দুই জন।

কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানী রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল।

বিষয়টি জানাজানি হলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিক কসাই নামে দুই জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিএনপি নেতার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনার পর কর্মী-সমর্থকরা গা-ঢাকা দিলে তাদের ভুড়িভোজের জন্য রান্না করা বিরিয়ানী স্থানীয়রা লুটপাট করে। এই ঘটনায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর মুঠোফোনে অনেকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিএনপি থেকে অব্যহতিপত্র।

তবে মুক্তা চৌধুরীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, তাদের বাড়িতে প্রতিবছরই গরু জবাই করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়। এই গরুটি গরুর মালিকের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার এসআই ওয়াজিউর রহমান জানান, শনিবার সকালে দক্ষিণ কয়রা গ্রামের মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে উত্তেজিত সহস্রাধিক লোকের মধ্য থেকে সুমন ও বজলু কসাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মুক্তা পালিয়ে যায়।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরম্নদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান জানান, গরু চুরির অভিযোগে দুইজনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নামে অজ্ঞাত আরও ৭ থেকে ৮ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮), মিঠু (৪০), জামিউল (৩৫), আব্দুল হাকিম (৩৫), রতন সরদার (৩৮), সুজন (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), সাজা (৫০), বাদল (৩২), ফতু মিয়া (৪০)।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

কৃষকের গরু চুরি করে মহিলা দলের সমাবেশে ভুড়িভোজ, আটক ২

Update Time : 10:27:50 pm, Saturday, 11 January 2025

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় এক কৃষকের গরু চুরি করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নারী সমাবেশের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভুড়িভোজ আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনায় গরুর চামড়া ও মাংসসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে, শনিবার বিকালে দলের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণের অভিযোগে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন উপজেলা বিএনপি।

মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি।

এর আগে শনিবার সকালে মাদারগঞ্জ পৌরসভার জোনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আয়োজনে এ নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে অংশ নেয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভুড়িভোজের আয়োজন করেন আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তার স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানী রান্নার জন্য শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মন্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠেছে।

চুরি হওয়া গরুর মালিক কৃষক এফাজ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে গোয়াল ঘরে গরু রেখে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজ খোলা ও ভেতরে থাকা তার নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু নেই। তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ও বিভিন্ন জায়গায় গরুর খোঁজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে শনিবার ভোরে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে চুরি হওয়া গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

আটক দুই জন।

কৃষক এফাজ মন্ডল আরও জানান, গভীর রাতে গরু জবাই করার মত কাউকে না পেয়ে সুমন মন্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানী রান্না করা হয় ও আংশিক মাংস রেখে দেয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মন্ডল।

বিষয়টি জানাজানি হলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমন মন্ডল ও বজলু প্রামাণিক কসাই নামে দুই জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি গরুর মাংস জব্দ করা হয়। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই বিএনপি নেতার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এই ঘটনার পর কর্মী-সমর্থকরা গা-ঢাকা দিলে তাদের ভুড়িভোজের জন্য রান্না করা বিরিয়ানী স্থানীয়রা লুটপাট করে। এই ঘটনায় বিএনপি নেতা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর মুঠোফোনে অনেকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিএনপি থেকে অব্যহতিপত্র।

তবে মুক্তা চৌধুরীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, তাদের বাড়িতে প্রতিবছরই গরু জবাই করে লোকজনকে খাওয়ানো হয়। এই গরুটি গরুর মালিকের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার এসআই ওয়াজিউর রহমান জানান, শনিবার সকালে দক্ষিণ কয়রা গ্রামের মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে উত্তেজিত সহস্রাধিক লোকের মধ্য থেকে সুমন ও বজলু কসাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান মুক্তা পালিয়ে যায়।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরম্নদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান জানান, গরু চুরির অভিযোগে দুইজনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে কৃষক এফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে ১২ জনের নামে অজ্ঞাত আরও ৭ থেকে ৮ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮), মিঠু (৪০), জামিউল (৩৫), আব্দুল হাকিম (৩৫), রতন সরদার (৩৮), সুজন (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), সাজা (৫০), বাদল (৩২), ফতু মিয়া (৪০)।