Dhaka 1:08 am, Saturday, 15 March 2025

তরুনদের মধ্যে হতাশা: এক নীরব মহামারি

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একাংশ বর্তমানে হতাশা ও মানসিক চাপের শিকার হয়ে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গবেষণা ও পরিসংখ্যান বলছে, তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি একটি ক্রমবর্ধমান সংকটে রূপ নিয়েছে, যা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০,০০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ। ২০২৩ সালের পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের আত্মহত্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি, কারণ অনেক আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিবেদন হয় না। তরুণদের একটি বড় অংশ পরিবারের উচ্চ প্রত্যাশা এবং সমাজের প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থার চাপে ভুগছে। উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত মানসিক চাপ তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ইইঝ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪০ লাখের বেশি শিক্ষিত বেকার রয়েছে, যা তরুণদের হতাশার একটি বড় কারণ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার তরুণদের মধ্যে একধরনের “সোশ্যাল কমপ্যারিজন” বা তুলনার মানসিকতা সৃষ্টি করেছে। এটা তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে হতাশা সৃষ্টি করছে। পরিবারের সঙ্গে মানসিক সংযোগের অভাব, প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বিবাহবিচ্ছেদ তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকার মিরপুরের ২২ বছর বয়সী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পড়াশোনার চাপ এবং বেকারত্বের দুশ্চিন্তায় আত্মহত্যা করেন। তার লেখা চিঠিতে উঠে আসে, “আমি ভালো ছেলেমেয়ে হতে পারলাম না। সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি।” সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করতে হবে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সেবা চালু করা দরকার।
তরুণদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও স্টার্টআপ সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
পরিবারের উচিত তরুণদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা এবং তাদের স্বপ্ন ও চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে।বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের হতাশা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ না দিলে তা জাতির জন্য বড় সংকট তৈরি করবে। সরকার, পরিবার এবং সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

তরুনদের মধ্যে হতাশা: এক নীরব মহামারি

Update Time : 08:59:57 pm, Tuesday, 28 January 2025

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একাংশ বর্তমানে হতাশা ও মানসিক চাপের শিকার হয়ে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গবেষণা ও পরিসংখ্যান বলছে, তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি একটি ক্রমবর্ধমান সংকটে রূপ নিয়েছে, যা পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০,০০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ। ২০২৩ সালের পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের আত্মহত্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি, কারণ অনেক আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিবেদন হয় না। তরুণদের একটি বড় অংশ পরিবারের উচ্চ প্রত্যাশা এবং সমাজের প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থার চাপে ভুগছে। উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত মানসিক চাপ তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ইইঝ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪০ লাখের বেশি শিক্ষিত বেকার রয়েছে, যা তরুণদের হতাশার একটি বড় কারণ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার তরুণদের মধ্যে একধরনের “সোশ্যাল কমপ্যারিজন” বা তুলনার মানসিকতা সৃষ্টি করেছে। এটা তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে হতাশা সৃষ্টি করছে। পরিবারের সঙ্গে মানসিক সংযোগের অভাব, প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বিবাহবিচ্ছেদ তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকার মিরপুরের ২২ বছর বয়সী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পড়াশোনার চাপ এবং বেকারত্বের দুশ্চিন্তায় আত্মহত্যা করেন। তার লেখা চিঠিতে উঠে আসে, “আমি ভালো ছেলেমেয়ে হতে পারলাম না। সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি।” সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করতে হবে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সেবা চালু করা দরকার।
তরুণদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও স্টার্টআপ সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
পরিবারের উচিত তরুণদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা এবং তাদের স্বপ্ন ও চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে।বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের হতাশা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ না দিলে তা জাতির জন্য বড় সংকট তৈরি করবে। সরকার, পরিবার এবং সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে।