Dhaka 8:45 am, Saturday, 15 March 2025

যে কারণে খেজুর গাছ শুধু শীতকালেই রস দেয়

শীত যত বাড়ছে খেজুরের রসের চাহিদাও তত বাড়ছে। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পিঠা ও পায়েস। তাই তীব্র শীত উপেক্ষা করে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য সময় পার করছেন নওগাঁর গাছিরা।

সুস্বাদু এই রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড়। ফলে কাজের চাপে দম নেওয়ার সময় পান না তারা। খেজুর ও রস বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এখানকার গাছিরা। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) বেঁধে রাখে রসের জন্য। পরদিন সকালে রস সংগ্রহ করা হয়।

খেজুর গাছ মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে। এই পানি পাতায় পৌঁছে গেলে পাতায় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য হিসাবে গ্লুকোজ তৈরি হয়। গ্লুকোজ পরে সুক্রোজ বা চিনিতে রূপান্তরিত হয়। গাছের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য এই চিনি খরচ হয়ে যায়।

খরচ হওয়ার পর যদি চিনি বেঁচে যায়, তাহলে চিনিগুলো স্টার্চ নামক অদ্রবণীয় জটিল শর্করা হিসেবে জমা থাকে। বর্ষাকালে মাটিতে প্রচুর পানি থাকে, তাই মূলের মাধ্যমে প্রচুর পানি শোষণ করে পাতায় প্রচুর খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে মাটিতে পানি কম থাকে, তাই পানির অভাবে পাতায় কম খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য খেজুর গাছ অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করে রাখে।

তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে মূল থেকে পানির শোষণ কম হতে থাকে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সংকেত খেজুর গাছের কোষে এক ধরনের এনজাইম ক্ষরণ হতে থাকে এই এনজাইমের প্রভাবে জমিয়ে রাখা স্টার্চ ভেঙ্গে আবার চিনিতে পরিণত হয়। মূল থেকে উঠে আসা পানির সাথে এই চিনি মিশে একটি মিষ্টি সরবত তৈরি হয়। এটাই হলো খেজুরের রস। যেহেতু মূল থেকে উঠা পানি উপরের দিকে ধাবিত হয়, তাই রস উপরের অংশে থাকা কোনো ক্ষত দিয়ে বের হয়। যেটা আহরণকারীরা গাছের ডগার ঠিক নিচের অংশে কেটে বের করে।

শীতকালে গাছের প্রস্বেদন কম হয়, তাই গাছ থেকে খুব কম পরিমাণ পানি বাষ্পাকারে বের হয়। গাছে ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়ে চিনি মিশ্রিত রস বের হয়। রস যত বের হবে, তত ব্যাপন চাপ ঘাটতি সৃষ্টি হয়, এই চাপ ঘাটতির কারণে একটি চোষণ শক্তির উদ্ভব হয়। চোষণ শক্তির প্রভাবে মাটি থেকে পানি শোষিত হয় এবং শীতকালজুড়ে রস বের হতে থাকে।

খেজুর গাছ কমপক্ষে ৫ বছরের না হলে রস উৎপাদন করতে পারে না। একটি পূর্ণ বয়স্ক খেজুর গাছ শীত মৌসুমে ১৫০-১৬০ লিটার রস উৎপাদন করতে পারে। গাছের গোড়ায় যদি ছিদ্র করা হয়, তাহলে রস আহরণ করা যাবে না।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

যে কারণে খেজুর গাছ শুধু শীতকালেই রস দেয়

Update Time : 06:44:06 pm, Tuesday, 21 January 2025

শীত যত বাড়ছে খেজুরের রসের চাহিদাও তত বাড়ছে। গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে এই রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পিঠা ও পায়েস। তাই তীব্র শীত উপেক্ষা করে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য সময় পার করছেন নওগাঁর গাছিরা।

সুস্বাদু এই রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড়। ফলে কাজের চাপে দম নেওয়ার সময় পান না তারা। খেজুর ও রস বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এখানকার গাছিরা। গাছিরা প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) বেঁধে রাখে রসের জন্য। পরদিন সকালে রস সংগ্রহ করা হয়।

খেজুর গাছ মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে। এই পানি পাতায় পৌঁছে গেলে পাতায় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য হিসাবে গ্লুকোজ তৈরি হয়। গ্লুকোজ পরে সুক্রোজ বা চিনিতে রূপান্তরিত হয়। গাছের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য এই চিনি খরচ হয়ে যায়।

খরচ হওয়ার পর যদি চিনি বেঁচে যায়, তাহলে চিনিগুলো স্টার্চ নামক অদ্রবণীয় জটিল শর্করা হিসেবে জমা থাকে। বর্ষাকালে মাটিতে প্রচুর পানি থাকে, তাই মূলের মাধ্যমে প্রচুর পানি শোষণ করে পাতায় প্রচুর খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে মাটিতে পানি কম থাকে, তাই পানির অভাবে পাতায় কম খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য খেজুর গাছ অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করে রাখে।

তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে মূল থেকে পানির শোষণ কম হতে থাকে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সংকেত খেজুর গাছের কোষে এক ধরনের এনজাইম ক্ষরণ হতে থাকে এই এনজাইমের প্রভাবে জমিয়ে রাখা স্টার্চ ভেঙ্গে আবার চিনিতে পরিণত হয়। মূল থেকে উঠে আসা পানির সাথে এই চিনি মিশে একটি মিষ্টি সরবত তৈরি হয়। এটাই হলো খেজুরের রস। যেহেতু মূল থেকে উঠা পানি উপরের দিকে ধাবিত হয়, তাই রস উপরের অংশে থাকা কোনো ক্ষত দিয়ে বের হয়। যেটা আহরণকারীরা গাছের ডগার ঠিক নিচের অংশে কেটে বের করে।

শীতকালে গাছের প্রস্বেদন কম হয়, তাই গাছ থেকে খুব কম পরিমাণ পানি বাষ্পাকারে বের হয়। গাছে ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়ে চিনি মিশ্রিত রস বের হয়। রস যত বের হবে, তত ব্যাপন চাপ ঘাটতি সৃষ্টি হয়, এই চাপ ঘাটতির কারণে একটি চোষণ শক্তির উদ্ভব হয়। চোষণ শক্তির প্রভাবে মাটি থেকে পানি শোষিত হয় এবং শীতকালজুড়ে রস বের হতে থাকে।

খেজুর গাছ কমপক্ষে ৫ বছরের না হলে রস উৎপাদন করতে পারে না। একটি পূর্ণ বয়স্ক খেজুর গাছ শীত মৌসুমে ১৫০-১৬০ লিটার রস উৎপাদন করতে পারে। গাছের গোড়ায় যদি ছিদ্র করা হয়, তাহলে রস আহরণ করা যাবে না।