
কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া ৩নং ওয়ার্ড এলাকায় ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ নেতা সোহেলের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও বসতবাড়ি হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়। আওয়ামীলীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাত্রা এখনো কমেনি সেই শ্রমিক লীগ নেতা সোহেলের।
বিষয়টির জন্য পুলিশ প্রশাসনের আশ্রয় নিতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেও আইনি সহায়তা পায়নি ভুক্তভোগীরা। উক্ত বিষয়ে সংবাদ কর্মীদের অবগত করলে তাদের সামনে পুনরায় সোহেল ও তার দলবল নিয়ে ওমর কাজির বাড়িতে ভাংচুর ও তাকে সহ ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রীকে পুনরায় হামলা করে এবং ওমর কাজীর ছেলেকে হাতুরি ও ক্রিস দিয়ে আঘাত করে। পরে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ ইলিয়াস খানের সহযোগিতায় বিকেলে পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওমর কাজী বলেন, কিছুদিন আগে আমার বাড়ির সামনে একটি টমটম গ্যারেজের ঘর করি। এই কাজে শ্রমিকলীগ নেতা সোহেল আমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে সোমবার রাত ৮টায় একটি সাউন্ড বক্স ভাড়া না দেওয়ায় এবং তার দলবল নিয়ে আমার গ্যারেজে রাখা দুটি টমটম, বসতবাড়ির গ্লাস, আসবাবপত্রসহ সকল উপকরণ ভাংচুর করে। এ বিষয়ে সোমবার রাত ৮টায় ৯৯৯ এ ফোন করেও কোন ধরনের সহায়তা পায়নি। পরের দিন বিকেলে সদর থানার ওসির সহায়তায় একদল ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনার পূর্ণ তদন্ত পরিচালনা করেন। আমি ও আমার পরিবার নিজের বাসায় এখন অনিরাপদ অনুভব করছি । তাই প্রশাসনের কাছে আমার পরিবারের জান ভিক্ষা চায়।
আহত আবুল ফয়েজ(ওমর কাজীর ছেলে) জানান, সোমবার রাতে আমার বাড়ির পাশে একটি সাউন্ড বক্সের দোকানে ছিলাম। আমার পাশের বাড়ির শ্রমিক লীগ নেতা, আওয়ামীলীগের দোসর সোহেল প্রকাশ ডাকাত সোহেল সাউন্ডবক্স ভাড়া না দেওয়ায় আমাকে ও আমার বাবা ওমর কাজিকে বেধরক মারধর করে। পরে এতে ক্ষান্ত না হয়ে পরেরদিন সকালে সাংবাদিকদের সামনে আমাকে হাতুরি ও ক্রিস নিয়ে গিয়ে আমার ঘরের ভেতরে ঢুকে প্রচন্ড আঘাত করে এবং আমার ঘরের সকল আসবাবপত্র, জানালার গ্লাস, টমটম ভাংচুর চালায়। এলাকার মুরব্বীরা সামাজিকভাবে মিমাংসার চেষ্টা করলেও তারা তাতে রাজি হওয়ায় জীবন বাচাঁতে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হলাম। ৫ই আগেস্ট তারা প্রকাশ্যে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি কামাল চেয়ারম্যানের সাথে প্রকাশ্যে অবৈধ বন্দুক চালিয়ে ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এবং সোমবার রাতেও দুই রাউন্ড ফাকা গুলি চালায়। ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার ছোট বোন নোহা ভারুয়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে স্কুলে যাওয়ার পরিবেশ ও নেই এই এলাকায়। ডাকাত সোহেল এর আগেও অনেকবার অস্ত্র সহ ধরা খেয়ে জেল খেটেছে। কিন্তু সে আওয়ামীলীগ করে বিধায় জেলে বেশিদিন থাকে না।
ভুক্তভোগী ওমরকাজীর স্ত্রী ক্যান্সাররোগী আয়েশা জানান, পাশের বাড়ির সোহেল ডাকাতের ভয়ে ভারুয়াখালীর সবাই আতঙ্কে রয়েছে। দিনদুপুরে মানুষ খুন করা তার পক্ষে অসম্ভব কিছু না। সে ও তার ভাই জোহেলসহ তাদের সহযোগী কাশমির আমার স্বামীর কাছে চাঁদাদাবী করায় এতে অসম্মতি প্রকাশ করলে আমার ছেলে আবুল ফয়েজ ও স্বামী ওমর কাজীকে দোকনের সামনে বেধরক মারধর করেছে। মঙ্গলবার আবারো তারা আমার বাড়িতে হামলা করে এবং আমার স্বামী, ছেলে, ননদকে হাতুরি, ছুরি ও ক্রিসদিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় রেখে একটি ছুরি। আমার ছেলে মেয়ে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে বের হতে পারতেছেনা। এভাবে চললে আমরা নিজের বাসায় নিরাপদবোধ করছি না। এতে আমি পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর আশ্রয় চাই।
ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার সর্দার জানায়, যেহেতু ঘটনা একটা হয়ে গেছে, আমরা দুই পক্ষের কাছে গেলেও সোহেল গং মীমাংসায় রাজি না হওয়ায় আমাদের পক্ষে কিছু করারা থাকল না। ওমর কাজীর পরিবারকে কিছুদিন বাসা থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানান।
স্থানীয়রা জানান, তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে মূলত এই ঘটনার উৎপত্তি হয়। ৩-৪দিন আগে ওমরকাজির মৌলানা বাড়ির ভিটায় সোহেল, কাশমিরও তার মদ্যসেবনের সহযোগীরা মদ খেয়ে মাতলামী করে কিছু চারা গাছ কেটে ফেলেছিল। মূলত এর থেকেই পুরো ঘটনার উৎপাত ঘটে। পরে সোমবার মাগরিবের পর ওমরকাজির ছেলের কাছে সাউন্ড বক্স ভাড়া করতে আসলে তা না দেওয়ায় ওমরকাজি ও তার ছেলেকে মাঝ রাস্তায় ব্যাপক মারধর করে। পরে এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ঘটনাস্থলে আসলে দুই পক্ষকে মিলিয়ে দিয়ে যার যার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু সোহেল ও তার ভাই জোহেল সহ দলবল নিয়ে ওমরকাজির বাড়িতে আবারো হামলা চালায় এবং তার ছেলে আবুল ফয়েজকে প্রচন্ড মারধর করে।
অপরপক্ষে সোহেলের বক্তব্যে তিনি জানান, আমার ভাগিনা কাশমিরের ভাতিজার খৎনার অনুষ্ঠানের জন্য দোকান থেকে সাউন্ড ভাড়ার জন্য পাঠালে তাকে না দেওয়ায় মূলত তার সাথে ওমরকাজির ছেলে আবুল ফয়েজের তর্কাতর্কি হয়। তাতে রাগ করে সাউন্ডবক্সটিতে হাতুরী দিয়ে আঘাত করি। এতে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে তারা আমাকে মারার কথা বললে রাতে আমি তাদের বাড়ির গ্লাস ভাঙ্গার বিষয়টি স্বীকার করছি। আমার মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় চিকিৎসা সেবা না দেওয়ার জন্য ডাক্তারকে মানা করে দেয়। পরে সাংবাদিক আসলে আমি ও আমার ভাই রাগ সহ্য করতে না পেরে তাদের বাড়ির গ্লাস পুনরায় ভাংচুর করি এবং ভাই জোহেল আবুল ফয়েজকে মারধর করে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ ইলিয়াছ খানের কাছে বিষয়টি অবগত করলে তিনি তৎক্ষনাত একদল ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।