
মুক্তিযোদ্ধা শুশুড়কে বাবা বানিয়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাফিয়া খাতুন ৯ বছর ধরে কর্মরত মাফিয়া। একাধিক তদন্তে প্রমাণিত হলেও নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা। তবে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে শনিবার (২৫ জানুয়ারী) বিকেল ৪ টায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু নূর মো: শামসুজ্জামান জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের জুলারখুপি গ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান এর ছেলে সেনা সদস্য খায়রুল ইসলাম খোকনের সাথে মাদারগঞ্জ উপজেলার সরদাবাড়ী গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর সাথে ২০১০ সালে বিবাহ হয়। ২০০৭ সালে বিবাহের পুর্বে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার সময় তার বাবা মার নাম ঠিকানা সঠিক দিয়ে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে ২০১১ সালে নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে জন্মদাতা হিসেবে পিতার নাম না দিয়ে শুশুড়ের নাম পিতা বলে দাবী করে রেজিস্ট্রেশন করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। বিবাহের পুর্বে রায়েরছড়া সরদাবাড়ী মডেল একাডেমী স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন মাফিয়া আক্তার মিতু। পরে তারপর নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রেও তাহার পিতার নামের পরিবর্তে শ্বশুরের নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন করেন। এরপর ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারী থেকে ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাহিয়া আক্তার সহকারী শিক্ষক হিসেবে এই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরোজমিনে তদন্ত করে ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করেন। এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন আবারো জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তদন্ত গিয়ে সত্যতা পেয়ে ৯ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান পরিবারে বড় মেয়ে নাম রহিমা আক্তার ও দ্বিতীয় ছেলের নাম শফিকুল ইসলাম খোরশেদ এবং ছোট ছেলের নাম খায়রুল ইসলাম খোকন মিয়া। খোকন বর্তমানে সেনা সদস্য। আর তার স্ত্রী মাফিয়া আক্তার মিতু সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে। কাগজপত্রে তারা ভাই বোন। ইসলামিক ভাবে আপন ভাইয়ের সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন যাপন করছেন তারা। জন্মদাতা পিতা বানিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে শিক্ষক মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছে তার কাছ থেকে কোমলমতি শিশুরা কি শিখতে পারে। জালিয়াতির এমন ঘটনার ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর ভাসুর মো. শফিকুল ইসলাম খোরশেদ মুঠোফোনে বলেন, মাফিয়া খাতুন মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।সে তার কাগজপত্রে আমার বাবার নাম ব্যবহার করতে পারে না। আমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তার জন্মদাতা হতে পারে না। বিষয়টি আমি যেদিন থেকে জানতে পেরেছি সেদিন থেকে নিজেই নিজের বাড়ীতে লজ্জায় যায় না। এবিষয়ে জামালপুর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ জানান, এনিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা থাকায় অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান এ প্রতিবেদক মাসুদুর রহমানকে জানান, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার থেকেই মাত্র অবগত হলাম। প্রতিবেদন আসা মাত্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অসুস্থ শ্রমিক হালিমা খাতুন, সবুজা বেগম, নুরজাহান ও রুবিনা জানান, রাতের টিফিন হিসেবে ডেনিস, কেক, কলা ও ডিম দেওয়া হয়। এগুলো খাওয়ার পরেই আস্তে আস্তে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়তে থাকে। তার সাথে পেটে জ্বালাপোড়া, পেট ব্যাথা ও বমি বমি ভাব শুরু হয়। সুইং সেকশনের শ্রমিক ইমরান জানান, কারখানার সাথেই আমার বাসা। টিফিন দেওয়ার পর আমি বাসায় চলে যাই। বাসায় গিয়ে আমার মেয়ে ইরানি ও শালিকা মিমকে টিফিন খেতে দেই। তারা টিফিন খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। কারখানার শ্রমিক সূত্র জানা যায়, আজ প্রায় এক হাজার শ্রমিককে ওভারটাইমে কাজ করানোর জন্য রাখা হয়। রাত আটটার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের টিফিন সরবরাহ করে। এর পরই অসুস্থ হতে থাকেন শ্রমিকরা। রোগীর সংখ্যা বেশি হতে থাকায় কারখানার ভেতর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। বারাকা ফ্যাশন লিমিটেড শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলী বলেন, কারখানাটিতে হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। আজ ওভারটাইম করানোর কথা ছিলো। পরে রাতে টিফিন খেয়ে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ শ্রমিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার শাহরিয়া লুনা বলেন, সাধারণত মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বমি, জ্বর ও পেট ব্যাথা হয়। কিন্তু হাসপাতালে আসা রোগীদের যে নমুনা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে সিরেটিভ বা ড্রাগ মিশ্রিত খাবার খেলে এমনটা হয়। টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসকান্দার হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সম্ভবত ফুড পয়জনিং এর কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ পরিদর্শক (টঙ্গী জোন) ইসমাইল হোসেন বলেন, অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।