Dhaka 3:43 pm, Saturday, 15 March 2025

কুমিল্লা অন্ধকল্যান সমিতির চক্ষু হাসপাতালের বেহাল দশা, প্রতিনিয়ত আস্থা হারাচ্ছে গরীব ও অসহায় রোগীরা

কুমিল্লা তথা পুরো বাংলাদেশের নারী সমাজের  অন্যতম অগ্রদূত একুশে পদক প্রাপ্ত প্রয়াত ডা:জোবায়েদা হান্নানের প্রাণন্তকর প্রচেষ্টায় ১৯৯৪ সাল থেকে চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। একটা সময়  হাসপাতালটি চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা রোগীদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা দখল করেছিল । কিন্তু এখন এসে দেখা যায় তার উল্টো। গরিব ও অসহায় রোগীরা দিন দিন আস্থা হারাচ্ছে এই হসপিটাল থেকে।
বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি কুমিল্লার পরিচালনা কমিটি বিগত ২ মাস যাবত নিরুদ্দেশ। গত নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ হতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই পরিচালনা কমিটির একজন ব্যতিত সবাই অনুপস্থিত বলে জানা গেছে। আর যে একজন উপস্থিত থাকেন তিনি হলেন কমিটির সেক্রেটারি ডা. আব্দুস সেলিম, তিনিও অনিয়মিত, মাঝে মধ্যে আসেন অফিসের জরুরি ফাইলের কাজ করার জন্য।
খবর নিয়ে জানা যায়, রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লব পরবর্তীতে কুমিল্লা জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির পুরাতন কমিটি ২০শে সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের মনোনিত এডভোকেট তাইফুল আলমকে সভাপতি করে পুনর্গঠন করা হয়। আগের কমিটি আংশিক পরিবর্তন করে পূর্বের কমিটির লোকজনকে বহাল রেখেই নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ নতুন কমিটিতেও আগের ফ্যাসিস্টদের রাখা ও বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়ে গত নভেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক মিটিং করে এডভোকেট তাইফুল আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই এই ফ্যাসিস্ট সমর্থিত কমিটি ভেঙ্গে দিবে বলে অঙ্গীকার করেন। এই অঙ্গীকার করার পর হতে পুরো কমিটি হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র সেক্রেটারি ও ট্রেজারার গোপনে এসে বিভিন্ন কাজ করে আবার চলে যান।
এই কমিটি নিরুদ্দেশের বিষয়টি জানা যায় সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনে থাকা জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির চক্ষু হাসপাতালের সেবার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য নিয়মিত যাতায়াত করে তাদের কমিটির দেখা না পেয়ে।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্ধকল্যান সমিতির রোগী ও আসেপাশের জনতা ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকদের মাধ্যমে জানা যায়, জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি পরিচালিত চক্ষু হাসপাতালের কর্মচারী জুলাই বিপ্লবে ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী যুবলীগের আ: হান্নান, শ্রমিক লীগের আবুল কালাম ড্রাইভার, বুড়িচং উপজেলার যুবলীগের সদস্য শাহজাহান ১ আগস্ট হতে ৫ আগস্ট প্রতিদিন অফিসে হাজিরা দিয়ে ছাত্রদের উপর হামলা করতেন।
এসকল বিষয়ে ছাত্ররা জানতে চাইলেই কমিটির সভাপতি এডভোকেট তাইফুল আলম কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার নাম করে সকল সদস্য মিলে অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের নিয়মিত না আসার কারণে কুমিল্লার একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির অধীনস্থ আলেখরচর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসায় স্থবিরতা এসেছে। গত অক্টোবরে যেখানে দৈনিক ১ হাজার হতে ১২শ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতো, সেখানে গত ১১ জানুয়ারী পর্যন্ত গড়ে মাত্র ৩৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসে। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে এই কমিটি অনুপস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান কতটা নিম্নমানে পৌঁছেছে।
এছাড়াও, স্থানীয় জনগণের অভিযোগ রয়েছে যে, হাসপাতালের বিভিন্ন সেবা ও কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েছে। রোগীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা না পাওয়া, ওষুধের সংকট, এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কারণে রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
অন্যদিকে, সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন এবং দ্রুত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তারা আরও জানান যে, হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নের জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, কুমিল্লার জনগণ ও রোগীরা দ্রুত সমাধানের আশায় আছেন এবং জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির কার্যক্রম পুনরায় সচল করার দাবি জানাচ্ছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

কুমিল্লা অন্ধকল্যান সমিতির চক্ষু হাসপাতালের বেহাল দশা, প্রতিনিয়ত আস্থা হারাচ্ছে গরীব ও অসহায় রোগীরা

Update Time : 12:09:21 am, Sunday, 12 January 2025
কুমিল্লা তথা পুরো বাংলাদেশের নারী সমাজের  অন্যতম অগ্রদূত একুশে পদক প্রাপ্ত প্রয়াত ডা:জোবায়েদা হান্নানের প্রাণন্তকর প্রচেষ্টায় ১৯৯৪ সাল থেকে চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। একটা সময়  হাসপাতালটি চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা রোগীদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা দখল করেছিল । কিন্তু এখন এসে দেখা যায় তার উল্টো। গরিব ও অসহায় রোগীরা দিন দিন আস্থা হারাচ্ছে এই হসপিটাল থেকে।
বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি কুমিল্লার পরিচালনা কমিটি বিগত ২ মাস যাবত নিরুদ্দেশ। গত নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ হতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই পরিচালনা কমিটির একজন ব্যতিত সবাই অনুপস্থিত বলে জানা গেছে। আর যে একজন উপস্থিত থাকেন তিনি হলেন কমিটির সেক্রেটারি ডা. আব্দুস সেলিম, তিনিও অনিয়মিত, মাঝে মধ্যে আসেন অফিসের জরুরি ফাইলের কাজ করার জন্য।
খবর নিয়ে জানা যায়, রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লব পরবর্তীতে কুমিল্লা জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির পুরাতন কমিটি ২০শে সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি বাহাউদ্দীন বাহারের মনোনিত এডভোকেট তাইফুল আলমকে সভাপতি করে পুনর্গঠন করা হয়। আগের কমিটি আংশিক পরিবর্তন করে পূর্বের কমিটির লোকজনকে বহাল রেখেই নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ নতুন কমিটিতেও আগের ফ্যাসিস্টদের রাখা ও বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়ে গত নভেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক মিটিং করে এডভোকেট তাইফুল আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি কয়েক দিনের মধ্যেই এই ফ্যাসিস্ট সমর্থিত কমিটি ভেঙ্গে দিবে বলে অঙ্গীকার করেন। এই অঙ্গীকার করার পর হতে পুরো কমিটি হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র সেক্রেটারি ও ট্রেজারার গোপনে এসে বিভিন্ন কাজ করে আবার চলে যান।
এই কমিটি নিরুদ্দেশের বিষয়টি জানা যায় সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের অধীনে থাকা জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির চক্ষু হাসপাতালের সেবার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য নিয়মিত যাতায়াত করে তাদের কমিটির দেখা না পেয়ে।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্ধকল্যান সমিতির রোগী ও আসেপাশের জনতা ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লোকদের মাধ্যমে জানা যায়, জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি পরিচালিত চক্ষু হাসপাতালের কর্মচারী জুলাই বিপ্লবে ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী যুবলীগের আ: হান্নান, শ্রমিক লীগের আবুল কালাম ড্রাইভার, বুড়িচং উপজেলার যুবলীগের সদস্য শাহজাহান ১ আগস্ট হতে ৫ আগস্ট প্রতিদিন অফিসে হাজিরা দিয়ে ছাত্রদের উপর হামলা করতেন।
এসকল বিষয়ে ছাত্ররা জানতে চাইলেই কমিটির সভাপতি এডভোকেট তাইফুল আলম কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার নাম করে সকল সদস্য মিলে অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের নিয়মিত না আসার কারণে কুমিল্লার একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির অধীনস্থ আলেখরচর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসায় স্থবিরতা এসেছে। গত অক্টোবরে যেখানে দৈনিক ১ হাজার হতে ১২শ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতো, সেখানে গত ১১ জানুয়ারী পর্যন্ত গড়ে মাত্র ৩৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসে। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে এই কমিটি অনুপস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান কতটা নিম্নমানে পৌঁছেছে।
এছাড়াও, স্থানীয় জনগণের অভিযোগ রয়েছে যে, হাসপাতালের বিভিন্ন সেবা ও কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েছে। রোগীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা না পাওয়া, ওষুধের সংকট, এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের কারণে রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
অন্যদিকে, সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন এবং দ্রুত সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তারা আরও জানান যে, হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নের জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, কুমিল্লার জনগণ ও রোগীরা দ্রুত সমাধানের আশায় আছেন এবং জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির কার্যক্রম পুনরায় সচল করার দাবি জানাচ্ছে।