গাজীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন ব্যক্তিগত সাম্রাজ্যে রূপ নিয়েছে। স্বাস্থ্য পরিদর্শক জিয়াউল হক জিয়ার বিরুদ্ধে একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তার অনুমতি ও উৎকোচ ছাড়া অফিস চলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। না দিলেই শোকজ, ছুটি বাতিল কিংবা অন্য ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে স্বাস্থ্য সহকারী ও ক্লিনিক কর্মীদের। স্থানীয় স্বাস্থ্য সহকারী ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি) জানান, ছুটি নিতে হলেও দিতে হয় নগদ অর্থ। সিগারেট থেকে শুরু করে উপহার, সবই ‘ম্যানেজমেন্ট’-এর অংশ। অনিয়ম ছড়িয়ে পড়েছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও। ট্রেনিংয়ে নাম অন্তর্ভুক্তি কিংবা বাদ দেওয়া হয় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে। কাশিমপুর, কোনাবাড়ী, কাউলতিয়া ও সদর উপজেলার একাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্লিনিক সময়মতো খোলা হয় না, আবার খুললেও কিছু সময় পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সাধারণ রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিয়মিত পরিদর্শনের কথা থাকলেও জিয়াউল হক ঘনিষ্ঠদের আগাম তথ্য দিয়ে রক্ষা করেন, আর বিরাগভাজনদের শোকজ করে দমন করেন। কাশিমপুর এলাকার এক সিএইচসিপি বলেন, “আগে বেতন পেয়ে জিয়া স্যারকে উপহার পাঠাতাম, এখন পাঠাতে না পারায় শোকজসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে স্বাস্থ্য পরিদর্শক জিয়াউল হককে ফোন দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি ফোন কেটে দেন। গাজীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খতিয়ে দেখা হবে।” তবে পরিদর্শনের অভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, “সরকার যাতায়াত ভাতা না দেওয়ায় নিয়মিত পরিদর্শন সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি স্বীকার করেন, “৮ু৯ মাস ধরে কর্মীদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না, তাই চুপ থাকতে হচ্ছে। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো: ইপিআই (টিকাদান কর্মসূচি)-এ প্রশিক্ষণহীন দুধ কোম্পানির কর্মীরা শিশুদের টিকা দিচ্ছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। অনেক শিশু টিকা দেওয়ার পর পায়ে চাকা হওয়াসহ নানা জটিলতায় ভুগছে। জানা গেছে, এসব কোম্পানি উপহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ঢুকছে এবং মায়েদের কৃত্রিম দুধ কিনতে উদ্বুদ্ধ করছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (who) নির্দেশনার পরিপন্থী। যেখানে শিশুস্বাস্থ্য হুমকির মুখে, দুর্নীতি প্রকট সেখানে এখনো দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং অভিযোগ জানালেও প্রশাসন তা এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ বি এম মনিরুজ্জামান
নির্বাহী সম্পাদক: রিপন রুদ্র
যুগ্ম-সম্পাদক: জাকিয়া সুলতানা (লাভলী)