এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় অন্যের জমি ইজারা নিয়ে সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মামুদকাটি গ্রামের প্রান্তিক চাষি শফিকুল ইসলাম। কয়েকদিন আগের ভারি বর্ষায় এই কৃষকের ৬ বিঘা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো কোমর পানিতে ডুবে আছে তার ধান। রোদে কিছুটা পানি টেনে যাওয়ায় এখন পঁচে যাওয়া ধান গাছ ফিকে হয়ে ভেসে উঠছে এই দরিদ্র কৃষকের ক্ষেতে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, নিজের জমি নেই। সমিতি (এনজিও) থেকে লোন তুলে ৩২ হাজার টাকায় সাড়ে ৫ বিঘা জমি লিজ নিছি। এক বিঘা নিছি ধানের উপরে। ধান উঠলে এ বাবদ মালিককে ৭ মণ দিতে হবে। সাড়ে ৬ বিঘা জমি চাষ, রোপন ও সার কীটনাশক দিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করিছি। ধান রোপনের পর তিন বার পানিতে তলাইছে।
এবারের বৃষ্টিতে তলায়ে ৬ বিঘা ধানগাছ পঁচে শেষ হয়ে গেছে। 'সমিতির লোন শোধ করব কি করে আর জমির মালিকেরে বা ধান দেব কিভাবে। এসব কথা মনে উঠলে মনে হয় বুক ফেঁটে মারা যাব। উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর মাঠে চার বিঘা আমন চাষ করেছেন কৃষক নাজিম উদ্দিন।
এরমধ্যে ৩ বিঘা জমিন ধান কোমর পানিতে ডুবে পঁচে গেছে। উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের ফটকের বিলে নিজের ৫ বিঘা জমিতে আমন করেছেন কৃষক জিয়াউর রহমান। তাঁর ৫ বিঘা ধান তলিয়ে পঁচে ভেসে উঠেছে। এই কৃষক বলছেন, তিন বার বৃষ্টির পানিতে আমন ধান তলাইছে। প্রথমবার নষ্ট হয়ে কিছু গাছ বেঁচে ছিল। পানি টানার পর সেখানে নতুন চারা রোপন করেছিলাম। পরের বার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে অর্ধেক গাছ পঁচে গেছিল।
এবার পুরোটাই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। এই বিলে কমপক্ষে ১২০ থেকে ১৫০ বিঘা জমির ধান পানির নিচে পঁচে গেছে। মামুদকাটি গ্রামের প্রান্তিক চাষি নূর আলম ১২ কাঠা জমি র্বগা নিয়ে আমন চাষ করেছেন। সেই ধান ১০ দিন ধরে পানির নিচে পড়ে আছে। তিনি বলেন, বৃষ্টির পরপরই ধান খেতে প্রচুর শেওলা জন্মেছে। যারজন্য ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ধান না হলেও ক্ষেত মালিকের ভাগেরটা শোধ করতে হবে। শুধু শফিকুল, জিয়াউর, নূর আলম বা নাজিমের নয়। সম্প্রতি বৃষ্টিতে আমন ধান তলিয়ে মনিরামপুর উপজেলার অন্ততঃ ২৪ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমনটি জানিয়েছেন কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, মনিরামপুরে চলতি আমন মৌসুমে ২২ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। গত ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের ভারি বৃষ্টিতে ৬ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। যারমধ্যে ৪ হাজার ৪৬৭ হেক্টর জমিন ধান তলিয়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমির ধান। উপজেলার মামুদকাটি, রঘুনাথপুর, খড়িঞ্চি, খেদাপাড়া, রোহিতা শেখপাড়া, বাগডোব, ইত্যা, কাশিমনগর, ঢাকুরিয়া, জয়পুর, শ্যামকুড়, হরিদাসকাটি, চালুয়াহাটি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বিলে পানি জমে আমন ক্ষেত তলিয়ে আছে।
কৃষকেরা বলছেন, এবারের বৃষ্টিতে তিন বার ধান ডুবেছে। শেষের বার জমিতে সার ব্যবহারের পরপরই বৃষ্টি হওয়ায় তলিয়ে যেয়ে ধান গাছ পঁচে গেছে। তাছাড়া শেষ বৃষ্টির পরে ৮- ১০ দিন পার হলেও এখনো ধানগাছ পানির নিচে। এসব জমিতে ধানের আর আশা করা যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে সরকারি সহায়তার দাবি তাঁদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, শেষের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় আমন চাষি বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। যেসব জমিতে ধানগাছ পানির নিচে ওই ধান আর হবে না। এতে করে মনিরামপুরে এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এ বি এম মনিরুজ্জামান
নির্বাহী সম্পাদক: রিপন রুদ্র
যুগ্ম-সম্পাদক: জাকিয়া সুলতানা (লাভলী)